বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে পুস্পস্তবক অর্পণ, সম্মিলিত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, ভাষা শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাতসহ নানা কর্মসূচিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ পালন করা হয়েছে।
যবিপ্রবিতে অমর একুশের মূল কর্মসূচি শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে। এরপর সম্মিলিত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। একুশের প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ। পরে একে একে যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ, ডিনগণ, বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, আবাসিক হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শুক্রবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে উপাচার্যের নেতৃত্বে যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হয়। পরে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সকাল ৭টায় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে প্রভাতফেরি বের করা হয়। প্রভাতফেরিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এতে যবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়াও যবিপ্রবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পরে তাঁরা ভাষা শহিদদের স্মরণে যবিপ্রবির কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তারপর সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে “৫২’র ভাষা আন্দোলন, জুলাই বিপ্লব ২৪ -সাদৃশ্য ও সমসাময়িক প্রাসাঙ্গিকতা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন বলেন, ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনার ধারাবাহিকতায় সকল বৈষম্য ও জুলুমের বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লব-২৪’র জন্ম হয়। এই বিপ্লবের চেতনা সমন্বত রাখা সকলের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এদেশের দীর্ঘ ইতিহাসের পরিক্রমায় কোনো স্বৈরশাসকের ঠাঁই হয় নাই। দেশের প্রকৃত উন্নয়নে এবং জনগণের যথার্থ ভাগ্য বিনির্মাণে এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিপ্লবী চেতনা কার্যকর রাখা অতীবও জরুরি। এ কাজে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে যবিপ্রবি দূর্নীতিমুক্ত ও আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আলোচনা সভায় ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মীর মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে “৫২’র ভাষা আন্দোলন, জুলাই বিপ্লব ২৪ -সাদৃশ্য ও সমসাময়িক প্রাসাঙ্গিকতা” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন ড. মো. আমজাদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন ড. মো. মুনিবুর রহমান, ফলিত পরিসংখ্যান ও ডেটা সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এইচ. এম জাকির হোসেনসহ বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানগণ, দপ্তর প্রধানগণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. মো. সাব্বির রহমান।
একইসাথে যবিপ্রবি ঝিনাইদহ ক্যাম্পাসেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মোমবাতি প্রোজ্জ্বলন, শহীদদের স্মরণে নিরবতা পালন, সম্মিলিত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ ছাত্র হলের হল প্রভোস্ট, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।
বাদ জুম্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ভাষা শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মো: আকরামুল ইসলাম।
আরইউএস