যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী প্রকৌশলী শেখ মইনউদ্দীনকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে তিনি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় এই দায়িত্ব পাবেন।
বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সড়ক ও সেতু অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তবে প্রকল্পগুলোর উচ্চ ব্যয়, দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ এবং কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই সমস্যাগুলো নিরসনে সরকার বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শেখ মইনউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ২৫ বছর ধরে সড়ক অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাঁর জন্ম খুলনায়, তবে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিভাগের নিরাপত্তা ও পরিচালনা শাখার প্রধান হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি বিভিন্ন প্রকৌশল ও ব্যবস্থাপনা পদে কাজ করেছেন।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, সড়ক ও সেতু খাতের উচ্চ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ এবং যানজট নিরসনের লক্ষ্যে তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া বিভিন্ন বড় প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে সমালোচনা থাকায় বর্তমান সরকার প্রকল্পের যথাযথতা যাচাই, ব্যয় হ্রাস এবং টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে জোর দিতে চায়।
শেখ মইনউদ্দীনের শিক্ষা ও কর্মজীবন পুরকৌশল, পরিবহন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ক্যালিফোর্নিয়া ও লুইজিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মজীবনে তিনি শত শত কোটি ডলারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে, লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘ডায়নামিক লেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালুর ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যা যানজট নিরসন ও মহাসড়কের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া, ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ও ২০২৮ সালের অলিম্পিক উপলক্ষে ক্যালিফোর্নিয়ায় পরিবহন কৌশল প্রণয়নে তাঁর সংশ্লিষ্টতা ছিল।
বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এলেঙ্গা-রংপুর, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণ ব্যয় যথাক্রমে ১০০ ও ১১৫ কোটি টাকা, যেখানে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সংযোগ মহাসড়কে ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। এই ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করাই হবে শেখ মইনউদ্দীনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা ও অন্যান্য শহরের যানজট নিরসন, সড়ক দুর্ঘটনা কমানো এবং গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় উন্নতির লক্ষ্যে শেখ মইনউদ্দীন তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নির্ধারণ করা হবে এবং সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে যৌক্তিক ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
সরকারের প্রত্যাশা, শেখ মইনউদ্দীনের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা দেশের সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।