রমজানের আগে বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ভোজ্য তেল ও চিনির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও ছোলা ও চিনিসহ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে, তবে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই এখনো উদ্বিগ্ন। ব্যবসায়ীরা দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে চিনির মজুত গড়ে তুলছেন। পাইকারিতে প্রতি কেজি ১১৪ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা পর্যায়ে দাম ১২০-১২৫ টাকায় উঠেছে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাজারে সব ব্র্যান্ডের চিনি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে ভোজ্য তেলের মজুতও বাড়ছে, তবে অনেক খুচরা বিক্রেতার দোকানে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে মিলছে না, যা দামের ওপর প্রভাব ফেলছে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের ধারণা, রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তেলের দাম বাড়াতে পারেন। অতীতে রোজার আগে এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। ২০২৪ সালেও রোজার আগে ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মূল্য সমন্বয় করে।
গত বছর জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অক্টোবরে সরকার আমদানি পর্যায়ে ভোজ্য তেলের ভ্যাট ৫% কমায় এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে। সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর তেলের দাম বাড়ানো হয়, যার ফলে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটারপ্রতি দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। দুই লিটার বোতল ৩৮০ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮৫২ টাকা করা হয়। খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাম বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। তারা প্রতি লিটার ১৫ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে, তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ১১ টাকা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করছেন। ২৩ জানুয়ারির এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মুস্তাফা হায়দার বলেছেন, ২০১১ সালে সরকার একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল, যাতে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি ১৫ দিন পর পর সমন্বয় করা হয়। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও অন্যান্য ব্যয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী মূল্য সমন্বয়ের দাবি করছেন। তবে সরকার রমজান পর্যন্ত তেলের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, বাজারে সরবরাহ কম থাকার অভিযোগ উঠলেও আমদানিকারক ও বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো তা অস্বীকার করেছে। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেছেন, প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণ তেল ডিলারদের সরবরাহ করা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হচ্ছে।
চিনির বাজারে সাম্প্রতিক শুল্ক ছাড়ের প্রভাবে দাম সামান্য কমলেও তা কতদিন স্থিতিশীল থাকবে, সে বিষয়ে ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা নিশ্চিত নন। সরকারি চিনিকল এবং টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে চিনি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণকারী সংগঠন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেছেন, বাজার তদারকির জন্য একাধিক সংস্থা কাজ করলেও ভোক্তারা তার সুফল পাচ্ছেন না। তিনি মনে করেন, মূল কারসাজির স্তরে যথাযথ মনিটরিং না হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকছে।