রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় গেলে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুইটি চিত্রের দেখা মেলে। একদিকে দেখা যায় তপ্ত রোদে যানজটে অতিষ্ট মানুষ অন্যদিকে তাকালেই দেখা যায় মন ভালো হয়ে যাওয়ার মত দৃশ্য। হেন কোনো ফুল নেই যা সেখানে নেই। টকটকে রক্ত লাল গোলাপ, গাঢ় হলুদ গাঁদা কিংবা শুভ্র দোলনচাঁপা। শাহবাগের একাটি প্রচলিত এবং সুন্দর দৃশ্য হলো যত্ন করে প্রিয়জনের হাতে বেলির মালা পরিয়ে দেয়া।
উৎসব পার্বনের দেশ বাংলাদেশ। সারা বছরই কোনো না কোনো উৎসব/অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। আর ফুল ছাড়া বাঙ্গালির কোনো উৎসব কল্পনাও করা যায়না। বিয়ে , জন্মদিন থেকে শুরু করে জাতীয় দিবসগুলোতেও ফুল একটি অপরিহার্য উপাদান। আর রাজধানী ঢাকায় এই ফুলের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা হলেন শাহবাগের ফুল ব্যাবসায়ীরা। এখানে রয়েছে ১২০টি ফুলের দোকান। খুচরা রয়েছে আরও শ’খানেক। অনেকের কাছে ফুলের একমাত্র প্রাপ্তিস্থান হিসেবে শাহবাগই পরিচিত। শহরের কেন্দ্রবিন্দু ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিকটবর্তী হওয়ায় শাহবাগে সংস্কৃতিমনাদের আনাগোনা বেশি থাকে, যারা ফুলের উল্লেখযোগ্য ক্রেতা।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় ফুল আসে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাভার, মানিকগঞ্জ, যশোর থেকে শুরু করে চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল ও ঝিনাইদহ। গভীর রাতে এগুলো জমা হয় রাজধানীর ফুলবাজারে। সূর্যর আলো ফেটার সাথে সাথেই সেই ফুল শাহবাগসহ ঢাকার অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
শাহবাগের দোকানগুলোতে ফুল পাইকারি এবং খুচরা বিক্রি হয়। শাহবাগে ফুল শুধু দোকানে নয় বরং রাস্তায় ও ফুটপাতেও বিক্রি হয়। দোকানগুলো থেকে পাইকারি ফুল কিনে সেগুলো আবার শহরের বিভিন্ন স্থানে খুচরা ব্যাবসায়ীরা বিক্রি করে। আবার ফুল পাইকারি দামে কিনে শাহবাগ এলাকাতেই হেঁটে হেঁটেও বিক্রি করতে দেখা যায় অনেককে।
এখানে ফুল ব্যবসাকে কেন্দ্র করে শুধু ফুল বিক্রেতাই নন বরং এর সাথে জড়িত ফুল প্যাকেজিংয়ের কাজ যারা করেন তাদেরও জীবিকাও চলছে এই শাহবাগকে কেন্দ্র করেই।
শতবর্ষ ধরে চলে আসা শাহবাগের এসব ফুলে দোকান একদিকে যেমন আমাদের উৎসব অনুষ্ঠানগুলোকে সুন্দর করে তোলে তেমনি আমাদের সংস্কৃতিকেও লালন করে আসছে বাহারি ফুলের সৌন্দর্য এবং সৌরভের মধ্য দিয়ে।