বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, রাজনীতিবিদদের কাদা ছোড়াছুড়ি পছন্দ করে না দেশের মানুষ। জামায়াতকে যারা সমালোচনা করে, তাদের আগে দলের ঐতিহাসিক অবদানের বিষয়টি মনে রাখা উচিত।
বুধবার (২৬ মার্চ) ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন না, বরং তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। “যদি ৭ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন, তবে ২৩ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেলেন কেন?”— এই প্রশ্নের উত্তর এখনো জাতি পায়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমরা যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি, তাদের এদেশ ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমাদের চারপাশে আধিপত্যবাদী শক্তি, আরেক পাশে বঙ্গোপসাগর। তাই ইসলাম এবং জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে আমরা এদেশকে ভালোবাসি।”
ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াত সেক্রেটারি বলেন:
❝স্বাধীনতার পর থেকে ভারত বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলার আগে তাদের নিজেদের ইতিহাস আয়নায় তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।❞
নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “আমরা শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার জন্য নির্বাচন চাই না, বরং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। রাষ্ট্রীয় সংস্কার এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের আয়োজন করলে জামায়াত তাতে অংশ নিতে প্রস্তুত।”
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে কতজন আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ হয়েছেন, সেই প্রশ্নের উত্তর দলটি দিতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছিল, যা বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেছিলেন ড. কামাল হোসেন। অথচ আজও তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন না।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিল জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, “১৯৭১ আমাদের গর্ব, তবে একে পুঁজি করে অন্য ঐতিহাসিক আন্দোলনগুলোকে অস্বীকার করা ঠিক নয়।”
সভাপতির বক্তব্যে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, “গত ৫৪ বছরে আমরা কখনো বাকশাল, কখনো সামরিক শাসন, আবার কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন দেখেছি। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ছিল আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মো: দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন এবং অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী মো. শামছুর রহমান, কর্মপরিষদের সদস্য যথাক্রমে মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, কামরুল আহসান হাসান, শাহীন আহমেদ খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন সহ মহানগরীর নেতৃবৃন্দ।