রুশাইদ আহমেদ: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ফলে বাড়ছে প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়কালে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
এর আগে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে প্রবৃদ্ধির হার তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছিল মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশে। সেই তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ছিল ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতি আগের স্তরের কাছাকাছি অবস্থানে ফিরে আসছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে, জুলাই মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে আগস্ট মাসে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক অসন্তোষ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এই টানা অস্থিরতা অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল, যার ফলস্বরূপ দেশের উৎপাদন ও সেবাখাত উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হয়। তবে পরবর্তীকালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।
বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাতের অবস্থা তুলনামূলক দুর্বল থেকেছে। কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ১ দশমিক ২৫ শতাংশে, যা আগের সময়ের তুলনায় কম। তবে শিল্প খাতের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। প্রথম প্রান্তিকে যেখানে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সেখানে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, তাই বর্তমান প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট ইতিবাচক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেবা খাতেও কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। প্রথম প্রান্তিকে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ, বর্তমান উন্নতি সামান্য হলেও আশাব্যঞ্জক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলমান স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে অর্থনীতির বিভিন্ন খাত আরও ভালো অবস্থানে ফিরতে পারবে। ভবিষ্যতে শিল্প ও সেবা খাতের অগ্রগতি দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তারা আশা করছেন।