কোটা সংস্কারের দাবিতে, অবমাননা করা হয়েছে আন্দোলনকারীদের দাবি করে গতকাল মধ্যরাতে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কোটা আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মশাল মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। এই সময় অনেক জায়গায় সড়ক অবরোধ করেন তারা। আন্দোলনকারীদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা নিয়ে করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে উতপ্ত হয়ে ওঠে ঢাবি ক্যাম্পাস। রাত ১১টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানের মাধ্যমে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বের হতে শুরু করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন। মেয়েদের হলগুলোতে সাধারণত রাত ১০ টার পর প্রবেশ-প্রস্থান নিষিদ্ধ হলেও তারা বের হয়ে যোগ দেন মিছিলে। এমন সময় ছাত্রলীগ নেতারা সূর্যসেন হল ও বিজয় একাত্তর হলের গেটে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যেতে বাধা দেন। তবে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে তাদের বের করে নিয়ে আসেন। এমন সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘এক দুই তিন চার, আমরা সবাই রাজাকার’ ইত্যাদি।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী তাদের রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন। একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী কখনোই সেই দেশের ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা বলতে পারে না। তাঁর এই কথার প্রতিবাদেই আমরা এই মধ্যরাতেও রাস্তায় নেমেছি। শেখ হাসিনাকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ থেকে কাঁঠালতলায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে ছাত্রী হলের তালা ভেঙে এই মিছিলে যোগ দেন নারী শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ ‘কে বলছে, কে বলেছে সরকার’ স্লোগানে তাঁতীবাজার মোড়ে অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর, বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে শাঁখারী বাজার, রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে পৌঁছে। সেখানে অবস্থান নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা গতকাল গভীর রাতে ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তারা রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। পরে এই মিছিল নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘেরাও করেন তারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে রাজাকারের নাতিপুতি বলে সম্বোধন করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের, যা শিক্ষার্থীদের জন্য চরম অপমানজনক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে মিছিল শেষ করে রাবির মেইন গেট সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
রাত ১১টার দিকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় নেমে আসেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের শেখ লুৎফর রহমান হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হন তারা। এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘এই বাংলার মাটি-রাজাকারের ঘাঁটি’, ‘শেরেবাংলার মাটি, রাজাকারের ঘাঁটি’-ইত্যাদি নানান ধরণের স্লোগান দিতে থাকেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও গতকাল রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে জিরো পয়েন্টের প্রধান ফটকের সামনে উপস্থিত হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এই সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘এই বাংলার মাটি-রাজাকারের ঘাঁটি’ ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকন। এমন সময় ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা ধাওয়া দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায় তখন।
গতকাল রাত ১২টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার পন্থি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা জিয়া মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে এসে মিলিত হয়। তারপর মিছিলটি নিয়ে আবারো জিয়া মোড়ে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করেন তারা।
সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা মূলত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জের ধরেই গতকাল মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। আজ সোমবার (১৫ জুলাই) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ঘোষিত কোনো কর্মসূচি নেই। কিন্তু, আজ বিকালে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানিয়েছে আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা।