রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বিভাগে চালকের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সচল ৩৫টি বাসের বিপরীতে চালক আছেন মাত্র ২২ জন। জনবল সংকট, ট্রিপ কমে যাওয়া ও তদারকির অভাবে নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি প্রতিবছর ৩৬০ টাকা করে ফি দেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ পরিবহন দপ্তর। গতিসীমা না মানা, চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা, স্টপেজে যথাসময়ে বাস না আসায় যথাসময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারার মতো ভোগান্তি প্রতিনিয়তই পোহাতে হয় তাদের।
পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত ১৬৭টি পদ থাকলেও বর্তমানে ৮৪টি পদ শূন্য। এদিকে মোট ৪৫টি বাসের মধ্যে সচল আছে ৩৫টি। সচল এসব বাসের বিপরীতে চালক রয়েছেন মাত্র ২২ জন। এমন জনবল সংকটে প্রতিদিন ২৫টি রুটে সীমিতভাবে বাস চলাচল করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালে ১৪টি রুটে ৩৯টি বাস দিনে ৮টি ট্রিপ চালাত। পরে ট্রিপ কমিয়ে তা দাঁড়ায় ৪টিতে। জ্বালানি সাশ্রয় এবং বাজেট ঘাটতির কারণ দেখিয়ে প্রশাসন আরও দুটি ট্রিপ বন্ধ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একটি ট্রিপ ফেরানো হলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নয়ন হয়নি।
এসব ট্রিপের মধ্যে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রথম ট্রিপ। এরপর ৯টা ১০ মিনিট, ১টা ১০ মিনিট ও বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে আরও তিনটি ট্রিপ চালানো হয়। এসব বাস নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে ফিরে আসে ৩০ মিনিট পর। রাতে ৮টা ১০ মিনিটে লাইব্রেরি শিক্ষার্থীদের জন্য ৩টি বাস চলাচল করে।
রাবির পরিবহন সেবা নিয়ে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াজেদ শিশির অভি বলেন, বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ট্রিপসংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে, যা শিক্ষার্থীদের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে দূরবর্তী আবাসিক এলাকার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারছে না, অনেক সময় বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র একটি পরিবহন সমস্যাই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করা। কিন্তু ট্রিপ সংখ্যা হ্রাস করে তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামিন বলেন, আমি প্রতিদিন কাটাখালি থেকে এসে ক্লাস করতে হয়। আমার প্রায় ক্লাসই থাকে ১১ টায় যার ফলে আমি বাস শিডিউল মেনে আসতে পারিনা। বাসের আশায় থাকলে ক্লাস করা সম্ভব না। এজন্য আমার অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আসতে হবে। যারা রাজশাহীর বাসিন্দা তারা মেসেও থাকতে পারেনা আবার বাসের সাথে সময় মিলিয়ে ক্লাসেও আসতে সমস্যা হয়।
সার্বিক বিষয়ে কথা হলে পরিবহন দপ্তর প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক সরকার জানান, জনবল সংকটের কারণে পরিবহন খাতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক কর্মচারী অবসরে চলে গেছেন আবার অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু প্রশাসন জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় এখানে একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন দপ্তরে মোট কর্মচারী ১৬৭ জনের মধ্যে ৮৪ জনই নাই। এই পদগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। জনবল নিয়োগের আগে পরিবহন খাত ঠিক হবেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাসের ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নাই। আগে দুপুরে ৩টি ট্রিপে বাস চলতো যা প্রশাসনে অনেকটা ঘাটতির সৃষ্টি করেছে। যাত্রীও তেমন পাওয়া যেতোনা। তিন থেকে চার জন যাত্রী নিয়েও বাসগুলো ক্যাম্পাসে ফিরে আসতো। একটা বাস এক লিটার তেলে এক থেকে দেড় কিলোমিটার যেতে পারে। ক্যাম্পাসে থেকে বানেশ্বর যাতায়াত করতে প্রতি ট্রিপে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়।
বাসের গতি ও বহিরাগতদের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী অফিসার ও শিক্ষকদের সাথে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রাখা যাবে কিন্তু বাস কার্ডের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারায় অনেক বহিরাগত লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চলাচল করে থাকে। বাসকার্ড বিষয়ে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহন করবো যাতে শিক্ষার্থীদের সেবা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি নির্ধারিত স্টপেজগুলো তে একটু বেশি সময় দিয়ে অতিরিক্ত স্টপেজ কমানোরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।