রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও সাবের চেয়ারম্যান ড. মুসতাক আহমেদ তার ফেসবুক ওয়ালে শিক্ষার্থী ও এই ন্যায্যতার আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন কটুক্তি করে একের পর এক পোস্ট করার কারণে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে (রাবি)’র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী। রবিবার(৪ আগস্ট) রাতে তারা এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেন।
বিবৃতিতে বলেন,চলমান আন্দোলন কোটাকে কেন্দ্র করে শুরু হলেও এর মূল চেতনা ছিল বৈষম্য বিহীন একটি ন্যায্য সমাজ। এই লক্ষ্যে ছাত্র সমাজ একযোগে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ন্যায্যতার সমাজ তৈরিতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। আমরা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অংশ নিয়েছিলাম।
তবে আন্দোলনের শুরু থেকে আমাদের বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ তার ফেসবুক ওয়ালে শিক্ষার্থী ও এই ন্যায্যতার আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন কটুক্তি করে একের পর এক পোস্ট দিয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন সুবিধাবাদী দালাল, চাটুকার ও চেতনা ব্যবসায়ী লোকদের ভাষা এবং তার এসব পোস্টের শব্দচয়ন আমাদের কাছে একই রকম বলে মনে হয়েছে। তিনি ১৬ জুলাই তার একটি পোস্টে লিখেন, “স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর নিজেদের গায়ে তুলে নিয়ে যে বা যারা নিজেদের ‘রাজাকার’ আলবদর দাবী করতে পারে, ‘আমি কে রাজাকার, তুমি কে রাজাকার’ বুলি আওড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে উত্তাপ ছড়াতে পারে, তাকে/ তাদের পড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হইনি। আমার পেছনে রাষ্ট্র বিনিয়োগ করেছে, এই পর্যায়ে আসতে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র দিয়েছে সম্মান। আমার মা-বাবা লাল সবুজ পতাকাকে সালাম দিতে শিখিয়েছে। সুতরাং যারা স্ব- ঘোষিত রাজাকার তারা আমার ক্লাস না করলেও অসুবিধা নাই। তাদের আবদারে আমি কোর্স ছাড়তে বাধ্য নই। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”
সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও বাংলাদেশে চলমান শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর সরকারের পোষ্য ঘাতক পুলিশ বাহিনী, র্যাব, বিজিবি সাধারণ-নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। এই হামলা ঠেকাতে এবং শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে আমাদের বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যার, সেলিম রেজা নিউটন স্যার, কাজী মামুন হায়দার স্যার যখন নিজেরা এগিয়ে যাচ্ছেন, পুলিশ বাহিনীর সাথে ধস্তাধস্তি করে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করছেন ঠিক সে সময় বিভাগের শিক্ষক ড. মুসতাক আহমেদের এমন পোস্ট আমাদের ব্যথিত, মর্মাহত করে।
অবাঞ্চিত ঘোষণা হওয়ার পর অধ্যাপক ড.মুসতাক আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন,অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি ‘স্বঘোষিত রাজাকার’ ট্যাগ নিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী আমার ফেসবুক পোস্টের পরিপ্রেক্ষতে আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। আমি তাদের মেধার কাছে পরাজিত হয়ে জড়িতদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।
আমি আমার আদর্শ থেকে এক চুল পরিমান বিচ্যুত হই নি, হবো না। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আদর্শে বিশ্বাসী এক লড়াকু সৈনিক৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর ২০০৪ সালে প্রভাষক টু সিন্ডিকেট সদস্য পদে নির্বাচব করেছি। ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক গ্রেফতারের প্রতিবাদে গণছুটিতে অংশ নিয়েছি। ২০০৯-২০১১ রাবির সহকারী প্রক্টরের দায়িত্বপালন করেছি। গণিত বিভাগের ছাত্র ফারুককে হত্যার পর লাশ ম্যানহলে ফেলে রাখা হয়েছিলো, অস্থির ক্যাম্পাসে সারারাত পাহারা দিয়েছি সহকারী প্রক্টর হিসেবে। ২০১৮-২০২১ পর্যন্ত মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বপালন করেছি। ২০২১-২০২৪ (৫ মে পর্যন্ত) বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি সফলভাবে। আমার চাওয়া পাওয়া ও হারানোর কিছু নেই। আমার অর্জন নিতান্তই আমার। আমাকে শ্রদ্ধা করা ও ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই। আমি আমি আদর্শ থেকে চুল পরিমান বিচ্যুত হতে শিখিনি।
দীন ইসলাম