দীন ইসলাম, রাবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী দোকান। দোকানগুলোর অধিকাংশেরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব দোকান বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত করছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসে লেখাপড়া করার জন্য। কিন্তু এখানে যেভাবে দোকানপাট বৃদ্ধি পাচ্ছে তা দেখে মনে হয়না, এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় যে যার মতো দোকান বসিয়ে দিচ্ছে। কোথাও বসে যে শিক্ষার্থীরা গ্রুপ স্টাডি করবে, সে পরিবেশ নাই। যে কেউ দেখলে মনে করবে এটা একটা বাজার। দোকানগুলোতে আড্ডা ও গানবাজনা চলতেই থাকে যার কারণে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া যায় না। যার ফলে পড়ালেখায় দারুণভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাছাড়াও এই ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো খাদ্যের মূল্যতালিকা মানছে না। আবার খাবারের মানও তেমন ভালো না। আমরা চাই প্রশাসন এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিক। দোকানগুলোকে একটা নির্দিষ্ট নিয়মের ভিতর এনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করুক।
সরেজমিনে দেখা যায়, টুকিটাকি চত্বর থেকে শুরু করে সিরাজী ভবনের সামনে , কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পেছনে, শহীদুল্লাহ কলা ভবন, মমতাজ উদ্দীন কলা ভবন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শের-ই বাংলা হলের মধ্যবর্তী স্থান, সৈয়দ আমীর আলী হল, জিয়া হল, মাদারবক্স হল, সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে অন্তত অর্ধশতাধিক ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে টুকিটাকি চত্বর থেকে সিরাজী ভবন পর্যন্ত এক নাগাড়ে অনেকগুলো খাবারের দোকান।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিক খান বলেন , বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য একটা পরিবেশ দরকার। আর এই পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের। কিন্তু আমরা দেখতেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে কানাচে ও ডিপার্টমেন্টের সামনে যেভাবে অবৈধভাবে বিভিন্ন দোকানপাট গড়ে উঠেছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ ভয়ংকরভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এখানে রবীন্দ্র ভবনে আমাদের ক্লাস হচ্ছে আর এর পাশে বসেই আড্ডা হচ্ছে,গান বাজনা হচ্ছে৷ যার ফলে আমরা ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারতেছিনা। আমরা চাই প্রশাসন এটা একটা শৃঙ্খলার ভিতর নিয়ে আসুক। আমাদের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করুক। এটাই আমাদের দাবি৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকান বরাদ্দের বিষয়টি দেখাশোনা করে এস্টেট দপ্তর। দপ্তর সূত্রে জানা যায় , বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও জায়গা বরাদ্দ পাওয়া জন্য প্রথমে এস্টেট দফতরের প্রধান কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে হয়। এস্টেট দফতর এ আবেদন তাদের উন্নয়ন কমিটির সভায় তোলেন। উন্নয়ন কমিটি হচ্ছে এস্টেট দফতরের নীতিনির্ধারণী কমিটি। যার সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। এর সদস্য থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েজন শিক্ষক। উন্নয়ন কমিটি অনুমোদন দিলে তা প্রকৌশল সেকশনে পাঠানো হয়। সেখান থেকে উপাচার্যের দফতরের পাঠানো হয়। উপাচার্য তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাস করিয়ে দেন।
আরও জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা মার্কেটে, বিনোদপুর, পরিবহণ মার্কেট, প্রথম ও চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের মাঝে, টুকিটাকি, স্টেশন বাজার এবং আবাসিক হলগুলোর আশেপাশেসহ সর্বমোট অনুমোদিত দোকান রয়েছে ৩৯৩টি। কিন্তু তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে বিভিন্ন অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে।
দোকানদাররা বলছে, ভ্রাম্যমাণ দোকান সম্পর্কে প্রশাসন অবগত থাকলেও তারা কোনো বাধাপ্রদান করছে না। লিখিত অনুমোদন না থাকলেও তাদেরকে মৌখিক অনুমোদন দেওয়া আছে। আর্থিক অনটনের কারণে কোনো কাজ না থাকায় জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এখানে দোকান বসিয়েছে তাঁরা।
এ ব্যাপারে এস্টেট কমিটির পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে দপ্তরটির সহায়ক রেজিস্ট্রার রজব আলী বলেন , ‘আমি দায়িত্বে এসেছি মাত্র এক/দেড় মাস হবে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে ভ্রাম্যমাণ দোকান গড়ে উঠেছে, এইবিষয়ে আমরা অবগত আছি। দোকানগুলোর তালিকাগুলোও আমাদের কাছে আছে। কোষাধ্যক্ষের অনুমতিক্রমে আমরা আগামী কিছুদিনের ভিতর দোকানগুলোতে চিঠি পাঠাবো। যদি তারা তাদের দোকানগুলো না সরিয়ে নেয়, তাহলে আমরা মাইকিং করে ২৪ ঘন্টার সময় দিবো। তারপর প্রশাসনের সহায়তায় দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
এবিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এস্টেট দপ্তরে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলমান। তারা আমাদেরকে এই বিষয়ে একটা চিঠি পাঠালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, আমাদের কোষাধ্যক্ষের নেতৃত্বে দোকানগুলোর একটা তালিকা তৈরি করা হচ্ছে৷ প্রক্টর ও স্টুয়ার্ড শাখার সহায়তায় তাদেরকে একটা নোটিশ দেওয়া হবে। যাদের অনুমতি নাই, তাদেরকে দোকান উঠিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ দোকান যার যেখানে ইচ্ছে, সেখানে বসাতে পারবেনা। অনুমোদন নিয়ে একটা শৃঙ্খলার ভিতর তাদের আসতে হবে। আর এটা আশা করি এই মাসেই এবিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।
দীন ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়