‘শব’ ফার্সি শব্দ। এর অর্থ রাত। আর ‘মেরাজ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ ঊর্ধ্বগমন। যেহেতু আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর রাসুল এক রাতে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করেছিলেন তাই সেই রাতকে শবে মেরাজ বলা হয়। আরবি ভাষায় একে লাইলাতুল মেরাজ বলা হয়।শবে মেরাজকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে বেশ কিছু প্রচলনসহ বিশেষ নামাজ ও রোজা রাখার প্রথাও প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে?
শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
শবে মেরাজ কুরআন-হাদিস ও ইজমায় উম্মতের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। এ রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কোনো মুসলমানেরই সন্দেহ নেই। এ ঘটনার পর রাসুল সা. বহু বছর ধরে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও, শবে মেরাজ-কেন্দ্রিক অনুশীলনের বিষয়ে বিশেষ আদেশ দেয়নি। রাসুল সা. তিনি নিজেও বিশেষ আমল করেননি।
রাসুল সা. সাহাবা কেরাম তাঁর মৃত্যুর পর প্রায় ১০০ বছর জীবিত ছিলেন।তারা ২৭ রজব বিশেষভাবে উদযাপন করেছেন এমন একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়নি। রাসুল সা. তিনি নিজে তা করেননি, সাহাবীরাও তা এড়িয়ে গেছেন। তাই ২৭ রজবের কোনো কাজকে দ্বীনের অংশ মনে করে সুন্নাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হাদীস ও সুন্নাহ নয়। একে বেদআত বলা হবে।
শবে মেরাজের নামাজ
নফল নামাজ ও রোজা নিঃসন্দেহে পুণ্যের কাজ। কিন্তু শবে মেরাজ উপলক্ষে ইসলামি শরীয়তে নামাজ ও রোজা রাখার কোনো বিশেষ বিধান নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহ. কিতাবে লতায়েফ ও মাআরেফ বলেছেন, রজব মাস সংক্রান্ত কোনো বিশেষ দোয়া নেই। রজব মাসের প্রথম শুক্রবার সালাতুর রাগায়েব সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।
আলেমদের মতে শবে মেরাজ উপলক্ষে দোয়া করা বিদআত। পরবর্তীকালে যে সমস্ত আলেমরা এই মত প্রকাশ করেন তাদের মধ্যে আবু ইসমাইল আনসারী, আবু বকর সামানি, আবুল ফজল ইবনে নাসির এবং আবুল ফারাজ ইবনে জাওযী এবং আরও অনেক পন্ডিত রয়েছেন।
শবে মেরাজে করণীয় ও বর্জনীয়
শবে মিরাজ উপলক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট নামায আল্লাহর রাসূলের হাদিস বা সাহাবীদের আমল বা তাবেয়িদের আমলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ রাতের কোনো ইবাদত আল্লাহর রাসূলের কোনো হাদিসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
শবে মেরাজ একটি কুরআনিক মহাসত্য। ইসলামের ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। নবীজীর জীবনের অনন্য মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব। শরীয়তে কোন বিশেষ আমল, রোজা বা ইবাদত নির্ধারিত নেই। মুমিনরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ধরনের ইবাদত ও নেক আমল করতে পারে।
কোরান-হাদিসের কোথাও শবে মেরাজ উপলক্ষে নফল রোজা রাখার কোনো বর্ণনা নেই। এই দিনে আল্লাহর রাসূল ও তাঁর অনুসারীরা কোনো বিশেষ রোজা পালন করেছেন বলে ইতিহাসে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই শবে মেরাজ উপলক্ষে এই দিনে রোজা রাখা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না।
রাসুল সা. সে রাতে সে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছিল। জাহান্নামের রক্ষক মালেক ফেরেশতাকে দেখেছিলো। (বুখারি 3182, মুসলিম 251)