ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ‘পার্টনারশিপস ফর এ মোর টলারেন্ট, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ’ (পিটিআইবি) যৌথ প্রকল্পের ‘ডাইভার্সিটি ফর পিস’ উদ্যোগের অধীনে “শান্তি চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩ পুরস্কার” জিতেছেন ২৫ জন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা।
রবিবার (৭ জুলাই) ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল মিলনায়তনে ঢাকাস্থ নরওয়ে দূতাবাসের সহযোগিতায় এবং স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ও ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে এই উৎসব আয়োজিত হয়েছে। এতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমরা চলেছি, সেখানে স্মার্ট এন্টারটেইনমেন্ট একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১২ সালে চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে এবং ৩ এপ্রিল-কে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ঘোষণা করেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় ও বাংলাদেশ হাই টেক পার্ক এর তত্ত্বাবধায়নে ১২টি জায়গায় সিনেমা কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রথম ফুল লেন্থ এ্যানিমেশন ফিল্ম ‘মুজিব আমার পিতা’ এবং বাংলাদেশের প্রথম থ্রিডি ফিল্ম ‘আমাদের ছোট্ট রাসেল সোনা’ তৈরি করেছি। বর্তমানে Future Animators & creative economy of smart Bangladesh ইন শর্ট Face of Smart Bangladesh উদ্যোগের মাধ্যমে এ আই টুল ব্যাবহার করে ২ডি/৩ডি ফিল্ম মেকিং করছি। সিনেমাসহ বিভিন্ন কন্টেন্ট এর মাধ্যমে যারা আজকে সম্মানিত হলেন, আমি আশা করি আপনাদের এ সকল ইতিবাচক কন্টেন্ট ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সোসাইটি তৈরিতে অগ্রগামী ভুমিকা রাখবে।
পিটিআইবি এর প্রজেক্ট ম্যানেজার রবার্ট স্টোলম্যান শান্তি চলচ্চিত্র উৎসবের পটভূমি তুলে ধরে বলেন,ো এটি এমন একটি সৃজনশীল প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে তরুণ নির্মাতারা তাদের কাজের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ, সহনশীল, বৈচিত্র্যময় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় স্মার্ট বাংলাদেশের ইতিবাচকগুলো গল্পগুলো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারে। এই উৎসবটি চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলী, এবং যারা সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছে তারা তাদের কাজগুলো দর্শক-শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরতে পারেন এবং জনগণ যেন নিজেদেরকে দায়িত্বশীল হিসেবে সমাজে উপস্থাপন করতে পারে তার জন্য একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম।
শতাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ভিডিও কন্টেন ক্রিয়েটর তাদের সৃজনশীল কাজ শান্তি চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩ এ জমা দিয়েছিলেন। উৎসবের জুরি বোর্ড ৬৬ টি স্বল্পদৈর্ঘ সিনেমা এবং ২২টি ভিডিও কনটেন্ট স্ক্রিনিং করে ২০টি শর্ট ফিল্ম, ২টি ডকুমেন্টারি, ২টি ভিডিও কনটেন্ট এবং একটি অ্যানিমেশনকে শান্তি চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩-এ সেরা হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জনাব মোঃ সামসুল আরেফিন বলেন, আজকে অনেকগুলো চলচ্চিত্রকে আমরা স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছি, যেগুলো স্মার্ট বাংলাদেশের ইতিবাচক আখ্যানগুলোকে চিত্রায়িত করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশের ৪ টি পিলারের মধ্যে একটি স্মার্ট সিটিজেন। দক্ষ এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত এই দুটো গুণ যার মধ্যে থাকবে সেই প্রকৃত স্মার্ট সিটিজেন। শান্তি মূলত মানসিক,শারিরীক এবং সামাজিক। শান্তির উপাদান দায়িত্বশীলতা ও সহমর্মিতা। তাই যে নাগরিক একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে, সমাজে দায়িত্বশীল আচরণ ও ভূমিকা পালন করবে সেই হবে স্মার্ট নাগরিক। আর এসব ইতিবাচক দিকগুলো সবার সামনে আপনারা তুলে ধরুন আপনাদের ক্যামেরায়।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র গভর্ন্যান্স স্পেশালিষ্ট শীলা তাসনীম হক শান্তি চলচ্চিত্র উৎসবের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমার কাছে শান্তির বার্তার মানে হলো সম্প্রতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকা। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাইফলক স্পর্শ করছি, তার মাঝে প্রধান হলো জনগণের সম্পৃক্ততা। এই সম্পৃক্ততা তৈরি করার অন্যতম মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। আমরা এখন ডিজিটাল হার্ম, ডিস ইনফরমেশন, মিস ইনফরমেশন সম্পর্কে জানতে পারছি। এগুলো মোকাবিলায় আমাদের এক সাথে পথ চলার জায়গা সুদৃঢ করতে হবে। সমসাময়িক ইস্যুগুলো সমাধানের বার্তাগুলো যেনো বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধতা না হয়, বৈশ্বিক স্তরে তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রকে ব্যবহার করার এখনই সময়।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মাননীয় নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) জনাব রণজিৎ কুমারের সভাপতিত্বে উৎসবে অন্যান্যদের মাঝে ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনের সভাপতি জনাব শীপা হাফিজা, এটুআই এর প্রোগ্রাম স্পেশালিষ্ট (উদ্ভাবন) জনাব মানিক মাহমুদ, পিটিআইবি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক জনাব মো: আবু সাঈদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের হেড অফ কমিউনিকেশনস জনাব মো: আব্দুল কাইয়ুমসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, পেশাদার চলচ্চিত্র নির্মাতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবেদিত শিক্ষার্থী, এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, স্মার্ট বাংলাদেশের ইতিবাচক আখ্যান তুলে ধরার উদ্দেশ্যে সৃজনশীল তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উৎসাহিত করতে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ২৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে আয়োজন করা হয়েছিল।