শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন, শিক্ষক এবং কর্মচারীদের সম্মিলিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিরোধী আন্দোলনে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আজ বুধবার ( ৩ জুলাই), ২০২৪ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে মানব বন্ধন এবং কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করে। পাশাপাশি দুপুর ১২ টায় শেকৃবির শেখ লুৎফর রহমান হলের সামনে একত্রিত হয়ে কোটা বিরোধী মিছিল শুরু করে শতাধিক শিক্ষার্থী।
কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ লুৎফর রহমান হলের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেইটে অবস্থান করে। এসময় আগারগাঁও- ফার্মগেট মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ ৪০ মিনিট রাস্তা অবরোধে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আজ কিছুসংখ্যক মানুষের স্বার্থের জন্য সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে একটা রায় দেয়া হয়েছে৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে, ফলাফল আগামীকাল দিবে। যদি রায় জনগণের জন্য না হয় তাহলে আমরা পরবর্তী পরিস্থিতিতে সারা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।
অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, এই ঘুণে ধরা রাষ্ট্রযন্ত্র কে ছাত্রসমাজ সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলো। ২০১৮ সালে আন্দোলনের মাধ্যমে এই রাষ্ট্রকে অনেকটা শুদ্ধতার মাত্রা দিতে পেরেছিলো। আমরা যদু সংগঠিত হই তাহলে সরকার, হাইকোর্ট যে রায় ই দেক না কেন আমরা একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে পুনরায় আমাদের অধিকার আমরা অর্জন করতে পারব।
এসময় শিক্ষার্থীরা, আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার; আমার দেশ আমার মা, বৈষম্য মানি না; কোটা বৈষম্য দুর কর, নইলে বুকে গুলি কর; সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে; আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম; জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে; দেশের মেধা দেশে থাক, কোটা প্রথা নিপাত যাক সহ নানা স্লোগান দেয়।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ পরবর্তী সময়েও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রেখেছিলেন জিডিপির ৫%, আর বর্তমান বাজেটে তা রাখা হয়েছে জিডিপির মাত্র ২% যা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিমের অন্তর্ভুক্তিকরণ শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের আর একটি পদক্ষেপ। এই পেনশন স্কিম চালু হলে দেশের মেধাবীরা শিক্ষার্থীরা কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশায় আসবে না।মেধাবীরা পাড়ি জমাবে বিদেশে। শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক আমলা শিক্ষদের সাথে কোনরুপ আলোচনা না করেই এই বৈষম্যমুলক পে স্কেল শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এই প্রত্যয় স্কিমে চিকিৎসা ভাতা,উৎসব ভাতাসহ কোন কিছুর বিস্তারিত উল্লেখ্য নেই এবং কোনরুপ গবেষণা ছাড়াই শিক্ষকদের গিনিপিগ বানিয়ে তাদের উপর এপ্লাই করার চেষ্টা চলছে।
এসময় শিক্ষকরা সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রত্যাবর্তনের দাবিসহ তাদের বিভিন্ন দাবি পেশ করেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেনশনের কোন বয়সসীমা রাখা যাবে না এবং আমলাদের সাথে কোন বেতনবৈষম্য না রাখার দাবি জানান।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায় না হওয়ায় পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
মাকতুম আল মুমিত
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়