দুপুর ৩টা ২৮ মিনিট। শহরের উদ্দেশ্যে দুপুর ৩টায় যে দুটি বাস ক্যাম্পাস ছাড়বে সেটির সামনে অবস্থান করছে শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ তারা বাসে জায়গা পায়নি। ভেতরকার অবস্থা আরও অবর্ননীয়। গাদাগাদি করে একজনের উপর আরেকজন দাঁড়িয়ে এবং বাসের দরজায় ঝুলে রয়েছেন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। এটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শুক্রবার, শনিবারের নিয়মিত পরিবহনের অবস্থা।
প্রতিদিনকার মতো শুক্র এবং শনিবারেও পরিবহন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে। জানা যায়, টিউশন ও অন্যান্য সুবিধার কথা চিন্তা করে গত বছরের ০৮ নভেম্বর শুক্র ও শনিবারে দুটি বাস চলাচলের অনুমতি প্রদান করে প্রশাসন। যা শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ফলে হরহামেশাই দেখা যায় বাস বাড়ানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের কথা বলতে, বাসের সামনে অবস্থান করতে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর তিনটার দিকে দুইটা বাস শহরের উদ্দেশ্যে ছাড়ার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বাস দুইটি আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা। এরপর আরেকটা বাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বাড়ালে ৩ টা ৪০ এর দিকে বাসগুলো শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং পরিবহণ পুলের তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিজস্ব বাস রয়েছে ৮ টি এবং ভাড়ায় চালিত বিআরটিসির বাস রয়েছে আরও ৮টি। যার সিট সংখ্যা প্রায় ৭৫০টি। মোট শিক্ষার্থী ও বাস সংখ্যার হিসেব মতে, ৩৭১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১টি বাস এবং ৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি সিট বরাদ্দ রয়েছে।
বাস বাড়ানোর দাবিতে লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের রাসেল মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনকে প্রতিবার বাস সংকট জানানোর পরও তারা এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি, যার কারণে আজ শনিবার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে বাস আটকে দেয়। ফলে কয়েকশো শিক্ষার্থী টিউশনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাথা সময়ে যেতে পারেনি। প্রশাসনের কাছে বাস সংকট নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলে এ বিষয়ে ভিসি ও ট্রেজারার স্যারের সাথে কথা বলুন। এখন সব বিষয়ে যদি ভিসি মহোদয় ও ট্রেজারার স্যারের কাছে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের তাহলে পরিবহন পুলের দায়িত্বটা কী?’
একই বর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম জয় বলেন, ‘শুক্র, শনি বাস দেওয়া যদি শিক্ষার্থী বান্ধব সীদ্ধান্ত হয় তাহলে বাসের এই স্বল্পতা যা প্রতিনিয়ত শিক্ষাথীদের ভোগাচ্ছে। এমনকি প্রশাসনের সাথে বার কথা বলার পরও সুরাহা না আসলে সেটি শিক্ষাথীদের সাথে এক প্রকার মশকরা। আমরা জীবনের তাগিদে যেভাবে ঝুঁকি নিয়ে বাসের দরজায় ঝুলে ঝুলে শহরে আসি এখান থেকে যদি কোনো শিক্ষার্থী দূর্ঘটনার কবলে পরে তাহলে এই দায়ভার কি প্রশাসন নিবে? শিক্ষার্থীরা কি কোনো রকম দূর্ঘটনার পতিত হওয়ার আগে এর সমাধান হবে না?’
এ ব্যাপারে পরিবহন পুলের সেকশন অফিসার আতিকুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু সমস্যাগুলো হচ্ছে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আগামীকালই অবহিত করব একটা-দুইটা বাস বাড়ানোর জন্য।
পরিবহন পুলের দায়িত্বে থাকা সহকারী রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাকে কয়েকজন ফোন দিয়ে বলছে যে বাসে জায়গা হচ্ছে না। এরপর আরেকটা বাস বাড়িয়ে তিনটা দেওয়া হয়েছে। যদি তিনটা বাস দিতেই হয় তাহলে ভিসি স্যারের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে দিয়ে হবে। আমি শুধু অর্ডার ক্যারি করি। আমার ক্ষমতা নাই বাস দেওয়ার।’
এবিষয়ে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরাও তো চাই দিতে, শিক্ষার্থীদের ভালো রাখতে। তবে আমাদের সক্ষমতা কতটুকু আছে সেটা বুঝতে হবে!’
এবিষয়ে জানতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলীর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।