‘বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা এখনো প্রধানমন্ত্রী’ এমন মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার ও সাবেক সাংসদ রুমিন ফারহানা।
বুধবার (০৮ অক্টোবর) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের গ্যালারি কক্ষে ‘সংবিধান : জনতার না ক্ষমতার?’ শীর্ষক শিরোনামে আয়োজিত আলোচনা সভায় ‘সংবিধান সংশোধন ও স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান’ প্রসঙ্গে আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন ।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৫৭ (৩) ধারা অনুযায়ী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রীই দায়িত্বে বহাল থাকবেন অর্থাৎ বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে শেখ হাসিনা এখনো প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের সংবিধানটি বৈপরীত্যে ভরা। সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। এই সংবিধানেরই ৮ অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি হলো গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ। এখানে সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে ইসলামকে রেখে ফের ধর্ম নিরপেক্ষতাকে মূলনীতি বলা হয়েছে। আবার ১২ অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়ন করতে রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিলে তা বিলুপ্ত করা হবে। আমার বাবা আওয়ামী লীগের সাথে মুসলিম শব্দ থাকায় দলটি ত্যাগ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন – ধর্ম আর রাষ্ট্র কখনো একাকার হতে পারেনা। এমন হলে ধর্মও অরক্ষিত হয়ে পড়ে এবং রাষ্ট্রও অচল হয়ে যায়।
সভায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মি ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শ্রেণি চরিত্র ও সংবিধানে অর্থনৈতিক সংস্কার’ প্রসঙ্গে বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রে দ্বন্দ্ব নিরসন, জাতিগত বহুত্বের দ্বন্দ্ব নিরসন করে সকল বহুত্বকে প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত করতে হবে। বৈষম্যকে প্রান্তিকতা মুক্ত করতে পারলেই রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে জনগণমুখী করা সম্ভব ।
এছাড়াও, ‘সংবিধানে মৌলিক প্রশ্ন ও সংস্কার ভাবনা’ নিয়ে আইনজীবী ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করাই হলো রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান ভিত্তি। এর পাশাপাশি ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রকে প্রাধান্য দেয়াসহ বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এবং শিক্ষাকে জণগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর পরেও সাংবিধানিক মূলনীতিতে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও সেটাকে রাষ্ট্র মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। বরং দীর্ঘদিন ধরে সাংবিধানিকভাবে প্রধান নির্বাহী দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি সংবিধানকে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার একটি হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংশোধন করতে করতে এই সংবিধানের কোথাও এখন আর অভিশংসন শব্দটি নেই। অর্থাৎ সংবিধান অনুসারে কেউই অপসারণ যোগ্য নয়।তাই সংবিধান সংশোধন নয় বরং পুর্নলিখন প্রয়োজন।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন আলোচকেরা।