কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ছয় বছর পর প্রশাসনের উদ্যোগে আবারও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠাকালীন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে। তবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সিড়ি করতে গিয়ে একটি ‘দুর্লভ প্রজাতির লাল সোনাইল’ গাছের ডালপালা কাটা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের সমালোচনার প্রেক্ষিতে গাছ না কেটেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ চালু রাখে প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সাথে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করতে বামপাশে পাহাড়ের উপর ‘CoU’ লিখা সংবলিত জায়গার পাশেই ভিত্তিপ্রস্তরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে মূল রাস্তার সাথে ভিত্তিপ্রস্তরের সংযোগ দিতে একটি সিড়ি করা হচ্ছে। আর এই সিড়ির ঠিক মাঝখানেই ‘দুর্লভ লাল সোনাইল’ গাছটি। সিড়ি নির্মাণ করতে প্রাথমিকভাবে গাছের ডালপালা কাটা হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য ও শিক্ষার্থীদের সমালোচনার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে গাছটিকে রেখেই দুই পাশে রাস্তা বাড়িয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ চলমান রাখে প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠাকালীন এই ভিত্তিপ্রস্তর পুনঃস্থাপনের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে আছেন ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম. এম. শরিফুল করিম। এছাড়া সদস্য সচিব হিসেবে আছেন ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের মো.আবদুল লতিফ এবং সদস্য হিসেবে আছেন ফিন্যান্স এন্ড একাউন্টস দপ্তরের নির্বাহী পরিচালক আবু তাহের।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কমিটির সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তা সম্প্রসারণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ভিত্তিপ্রস্তরটি ভাঙা হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময় ফলকটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানালেও সেটি কার্যকর করা হয়নি। ৫ই আগস্টের পর আওয়ামী সরকাররের পতন হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানালে প্রায় ছয় লক্ষ টাকার বাজেটে ফের ভিত্তিপ্রস্তরটি পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু হয়।
দীর্ঘ ছয় বছর পর ফের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ব্যাপারে অধ্যাপক ড. এম. এম. শরিফুল করিম বলেন, “গণতন্ত্র এবং ঐক্যের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া নিজে এসে এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এবং এই সময় কুমিল্লার সকল এমপি উপস্থিত ছিলেন। যার কারণে এইটা আমাদের স্মৃতি এবং কুমিল্লা বাসীর জন্য আবেগ। আমরা ভেবেছিলাম এটা সারাজীবন থাকবে কিন্তু গত প্রশাসনের আগের প্রশাসন সৌন্দর্য বর্ধনের নামে এটা ভেঙে ফেলে। আমরা বিভিন্ন সময় দাবি জানালেও প্রশাসন সেটি পুনঃস্থাপন করেনি। এরপর ৫ই আগস্টের পর সর্বপ্রথম আমরা এটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানাই এবং প্রশাসন সেই দাবি গ্রহণ করে।”
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন,
“উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, প্রক্টর এমনকি সিনিয়র যারা শিক্ষক আছেন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ক্যাম্পাসে ঢুকতেই একটা সুন্দর জায়গায় যেন এটি দেখা যায় এবং সেটি আগেরটার আদলেই নির্মাণ করা হবে।”
‘দুর্লভ লাল সোনাইল’ গাছ কাটার ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমরা আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম গাছটিকে অন্য জায়গায় প্রতিস্থাপন করব। যেহেতু শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানিয়েছে ফলে গাছটিকে এইখানে রেখেই দুই পাশে রাস্তা বাড়িয়ে সিড়ি নির্মাণ করা হবে।”