ঢাকা রাজধানী সরকারি তিতুমীর কলেজ ৫৬ থেকে ৫৭ বছরে পা রেখেছে। ১৯৬৭ সালে ৭ মে এই বিদ্যাপিঠ। তখনকার সময় নাম ছিল জিন্নাহ কলেজ। পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর কলেজটির নাম রাখা হয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ মীর নেছার আলী তিতুমীরের নামে নামকরণ করা হয়।
প্রতিষ্ঠান ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান জগন্নাথ কলেজের ছাত্র আন্দোলনকে নির্মূল করার জন্য মহাখালীতে অবস্থিত ডিআইটি খাদ্যগুদাম হিসেবে পরিচিত ভবনে জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি শাখা স্থানান্তর করেন। এর নামকরণ করা হয় “জিন্নাহ কলেজ”।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান রেডিও-টেলিভিশনে এক ভাষণে জাতীয় পরিষদ স্থগিত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে জিন্নাহ কলেজ শাখার ছাত্র সংসদের প্রথম সহ সভাপতি (ভিপি) সিরাজউদ্দৌলার নেতৃত্বে টিপু মুনশি ও শাহাবুদ্দিনসহ তৎকালীন কয়েকজন ছাত্রনেতা প্রতিক্রিয়া হিসেবে জিন্নাহ কলেজের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেন।
তখন আনিসুজ্জামান খোকন (জিন্নাহ কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক) জিন্নাহ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ প্রস্তাব করেন। পরে ২ মার্চ ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় জড়ো হলে সেখানে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রবের মধ্যস্থতায় জিন্নাহ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ হিসেবে চূড়ান্ত হয়। ওই রাতেই ‘তিতুমীর কলেজ’ নামকরণের সাইনবোর্ড লেখা হয় এবং দেয়ালে টানিয়ে দেওয়া হয়। এলাকার কিছু যুবকও কলেজের নাম ‘তিতুমীর’ করার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
শিক্ষার্থী সংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মহাবিদ্যালয় সরকারি তিতুমীর কলেজ। আজ মঙ্গলবার (৭ মে ২০২৪) কলেজটি ৫৭ বছরের পা রাখে। ১১ একর জায়গায় নিয়ে সবুজে ঘেরা এই বিদ্যাপিঠ। এই বিদ্যাপিঠের নীতিবাক্য “জ্ঞানই শক্তি” । বর্তমানে ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে বিজ্ঞান অনুষদ, বাণিজ্য অনুষদ এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভিন্ন বিভাগ চালু রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আবাসিক ছাত্রাবাসের সুবিধাও। নতুন-পুরনো মিলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক পাঁচটি হল রয়েছে– আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাস, সুফিয়া কামাল ছাত্রী নিবাস, সিরাজ ছাত্রী নিবাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল।
শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজের নিজস্ব ব্যবস্থাপনাও বেশ সমৃদ্ধ। ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য বিআরটিসি লাল বাস, সম্পর্ক, অগ্নিবীণা, সোনার তরী, সাদা বাস, চলন্তিকা, সৌহার্দ্য, মতিউর রহমান, অনিন্দ্যরা বাস রয়েছে। বর্তমানে সরকারি কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম এবং উপাধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠার সময় কলেজটিতে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ক্লাস নেওয়া হতো। অবশ্য পরে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মো: শফিক খান
সরকারি তিতুমীর কলেজ