রুশাইদ আহমেদ: সারা দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রথমবারের মতো ‘সরকারি ফার্মেসি’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই ফার্মেসিগুলোর মাধ্যমে জনগণ সহজেই জনপ্রিয় ২৫০ ধরনের ওষুধ পাবেন বাজারমূল্যের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মূল্যে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের সব সরকারি হাসপাতালের চত্বরে এই ফার্মেসিগুলো চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হলো গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দেওয়া এবং চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস করা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন:
❝বর্তমানে আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ল্যাব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা থাকলেও ফার্মাসিউটিক্যাল সেবা অনুপস্থিত। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সেই শূন্যস্থান পূরণ করা হবে। সরকারি ফার্মেসি চালুর ফলে সাধারণ মানুষ তিন ভাগের এক ভাগ দামে প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে পারবেন, যা স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করবে।❞
ডা. সায়েদুর রহমান আরও ব্যাখ্যা করেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ উচ্চমূল্যের ওষুধ কেনার সামর্থ্য রাখেন না। ফলে তারা চিকিৎসা সেবা গ্রহণে বাধাগ্রস্ত হন এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। সরকারি এই ফার্মেসি গড়ে তোলা হলে, নাগরিকদের চিকিৎসা ব্যয় অনেকটাই হ্রাস পাবে এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে সরকারি ফার্মাসিউটিক্যাল কর্পোরেশন (ইডিসিএল) প্রতিবছর প্রায় ১,৩০০ কোটি টাকার ওষুধ ক্রয় করে থাকে। ভবিষ্যতে এই বাজেট আরও বাড়িয়ে, প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বেশি ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। সরকারের লক্ষ্য হলো উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সময়মতো মানসম্পন্ন ওষুধ সরবরাহ করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের স্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। সরকারি ফার্মেসি চালু হলে ওষুধের বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, যার ফলস্বরূপ বেসরকারি ফার্মেসিগুলোও দাম কমাতে বাধ্য হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, সব মিলিয়ে এই প্রকল্প যদি সত্যি সত্যি বাস্তবায়িত হলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে সাশ্রয়ী মূল্যে জনসাধারণের ওষুধের চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনই সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভোগান্তি লাঘব হবে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। ফলে বাড়বে জীবনযাত্রার মানও।