রুশাইদ আহমেদ: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা এই বিক্ষোভ করেন।
এ সময়, শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী বলেন, জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ। যার আত্মত্যাগের বিনিময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়।
তিনি বলেন, যে আবু সাঈদকে হত্যার মাধ্যমে এই গণআন্দোলন শুরু হয়েছে, তার বিচারের দাবিতে আজকে তার সহকর্মীদের এখানে উপস্থিত হওয়া সত্যিই লজ্জার। যার রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে তার বিচারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
রমজান আলী দাবি করেন, চুনোপুটিদের গ্রেপ্তার করে ঊর্ধ্বতন যে সকল কর্মকর্তা আছে তাদেরকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকলেও তারা বহাল তবিয়তে এখনো কর্মরত আছে বলেও অভিযোগ করে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় জড়িতদেরকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
ছাত্রদল কর্মী মোঃ ইমরান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বারবার স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর তারা একটি মামলা করে। এই মামলায় দু-একটা হাতে গোনা আসামি বাদে বাকি সকল আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে। আবু সাঈদ হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীরা এখনো ফেসবুকে প্রকাশ্য দিবালোকে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি হওয়ার কথা ছিল সাবেক ভিসি, প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট। অথচ মামলায় তাদের নাম আসেনি। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন ,আপনারা কাকে বাঁচানোর জন্য কালক্ষেপণ করছেন। আবু সাঈদের হত্যায় যারা জড়িত তাদের বিচারের দাবিতে এই মানববন্ধন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য লজ্জার।
আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধা মো. শাফি বলেন, আমি আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী হিসেবে বলতে চাই ঢাকায় বসে কোনো তদন্ত হবে না। তদন্ত হবে রংপুরের মাটিতে। কার সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতি হচ্ছে এবং কার ইন্ধনে, কার বক্তব্যের ভিত্তিতে এই মামলায় আসামি করা হচ্ছে, কাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে সে প্রসঙ্গেও প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত প্রতিটি নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক রহমত আলী বলেন, আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার নয় মাস অতিবাহিত হলেও খুনিরা এখনো গ্রেপ্তার পর্যন্ত হয়নি। তারা এখনো আইনের আওতার বাইরে রয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই— আপনারা আমাদের অনেকবার আশ্বস্ত করেছেন কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি আবু সাঈদের হত্যায় জড়িত সেই পুলিশ এখনো ইউনিফর্ম পরে কর্মরত অবস্থায় আছে। আপনারা যদি পুলিশের সেই কলঙ্ক মুছতে চান তাহলে অনতিবিলম্বে সে সকল পুলিশদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুর নগরীর পার্ক মোড়ে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং ফটক সংলগ্ন সড়কে চলমান আন্দোলনকারীদের উপর টিআরশেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়া শুরু করে পুলিশ।
সেই সময়, মিছিলের সামনে থেকে বুক পেতে দিলে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যায় বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের শরীর। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।