ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে একত্রিত করে গঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (Dhaka Central University, DCU)। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হলো কলেজগুলোর দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক জটিলতা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির সময়ে পরীক্ষা ও ফল প্রকাশে বিলম্ব, শিক্ষার্থী আন্দোলন) দূর করে একটি স্বতন্ত্র ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করবেন।
এই বিশ্ববিদ্যালইয়ে ৬০% ক্লাস কলেজ ক্যাম্পাসে সশরীরে এবং ৪০% অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং শিক্ষার মান নিশ্চিত করার জন্য ভার্চুয়াল ল্যাব, AI-চালিত লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল রিসোর্সের সমন্বয়ে হবে।
প্রতিটি কলেজে নির্দিষ্ট অনুষদের কোর্স চালু হবে। উদাহরণস্বরূপ যেমন তিতুমীর কলেজ: ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, বাঙলা কলেজ মানবিক অনুষদ ও অন্যান্য কলেজে বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ইত্যাদি অনুষদ চালু হতে পারে। বর্তমানে কলেজগুলোতে সমন্বিত কোর্সের পরিবর্তে অনুষদকেন্দ্রিক বিশেষায়িত শিক্ষা দেওয়া হবে।
তাছাড়াও শিক্ষকেরা বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত থাকবেন, তবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী তাদের ভূমিকা পুনর্গঠিত হতে পারে। উচ্চমাধ্যমিক স্তর বজায় রেখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু হবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস. এম. এ. ফায়েজের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, মডেল ও আইনি কাঠামো প্রণয়নে কাজ করছে। ডিসেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারির লক্ষ্যে কাজ চলছে।
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল চ্যালেঞ্জ আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা ও বিসিএস ক্যাডারের শিক্ষকদের নতুন মডেলের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং কলেজগুলোর মধ্যে সমন্বিত লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LMS) গড়ে তোলা।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়া পর্যন্ত কলেজগুলো ইউজিসির তত্ত্বাবধানে চলবে।
একটি কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক নিয়োগ করে সাময়িকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমান ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে।
“ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি” নামটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো ২০২৫ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করা ।
শিল্প-শিক্ষা সমন্বইয়ে বেসরকারি সংস্থা ও টেক জায়ান্টদের সাথে পার্টনারশিপ গড়ে তোলা হবে।গবেষণার ক্ষত্রে জলবায়ু সমাধান, ডেটা সায়েন্স ও সামাজিক উদ্ভাবনী প্রকল্পে জোর দেওয়া হবে।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সাফল্য নির্ভর করবে নীতিনির্ধারকদের সক্ষমতা, প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ওপর। যদি এই মডেল সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, এটি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে, বিশেষত কোয়ালিটি এডুকেশন ও শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা ও সংস্কারবিরোধী মনোভাব এড়াতে স্বচ্ছ যোগাযোগ ও অংশীদারিত্ব অপরিহার্য।