সিরিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে তুরস্ক নিজেকে প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তুরস্কের প্রভাবকে কাজে লাগাতে চাইছে। আঙ্কারা সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে এবং আংশিক সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখে দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তুরস্কের ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
সিরিয়ার বিদ্রোহী দলগুলোকে সমর্থন দিয়ে তুরস্ক নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এতে তুরস্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সিরিয়ার রাজনৈতিক সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেয়েনও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছেন।
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ব্রুগেলের সিনিয়র গবেষক জ্যাকব ফাংক কার্কেগার্ড মনে করেন, তুরস্ক এখন সিরিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী মধ্যস্থতাকারী। পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ায় রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে তুরস্কের মধ্যস্থতা ছাড়া আর কোনো কার্যকর পথ খুঁজে পাচ্ছে না।
ইইউ-তুরস্ক সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ
সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে তুরস্ক ও ইইউর মধ্যে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। ইইউ চায় সিরিয়ায় রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠন হোক এবং তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো কুর্দি মিলিশিয়াদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে না পড়ুক। তবে তুরস্ক ইতোমধ্যেই সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে।
সিনিয়র গবেষক মার্ক পিয়েরিনি মনে করেন, তুরস্কের সামরিক উপস্থিতি এবং আঞ্চলিক ভূমিকা সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর শেষাংশ এখনও সিরিয়ায় সক্রিয়, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্বেগ তৈরি করছে।
শরণার্থী সংকট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তুরস্কে বর্তমানে ৩৫ লাখেরও বেশি সিরীয় শরণার্থী অবস্থান করছে। আঙ্কারা চায়, এই শরণার্থীরা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাক। তবে তাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আইনি এবং অবকাঠামোগত জটিলতা রয়েছে। সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি শরণার্থীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না।
সিরিয়ায় অনেক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, যা শরণার্থীদের ফেরার পথ আরও কঠিন করে তুলেছে। পিয়েরিনি বলেন, শরণার্থীদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার জন্য ইইউকে সিরিয়ায় অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করতে হবে।
তুরস্কের দ্বৈত কৌশল
তুরস্ক একদিকে রাশিয়া এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে, অন্যদিকে ইইউর সঙ্গে শরণার্থী ইস্যুতে সহযোগিতা করছে। তবে তুরস্কের ইইউতে অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে রয়েছে। এরদোয়ানের কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও তুরস্কের আঞ্চলিক প্রভাব এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে।
সংক্ষেপে, সিরিয়ায় তুরস্কের ভূমিকা বর্তমানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক শক্তির সঙ্গে তুরস্কের কৌশলগত সম্পর্ক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা রাখবে।
আরএস//বিএন