চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের পাঁচবারের সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের ২০ গজ ভেতরে বাংলাদেশের গাজীর বাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করে বিজিবি। বিজিবি সদর দপ্তর ফজলে করিম চৌধুরীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে চুক্তি করে তিনি পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে দাবি করেছে স্থানীয় সূত্র। এ সময় তার সঙ্গে পাচারকারী দলের এক সদস্য এবং স্থানীয় সাবেক এক ইউপি সদস্যকেও আটক করা হয়। ফজলে করিম চৌধুরী বিজিবি সদস্যদের বলেছেন, চিকিৎসার জন্য তিনি অবৈধ পথে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে এটি ভুল হয়েছে। বিজিবি তার লাল পাসপোর্টটিও জব্দ করেছে। ফজলে করিমের সঙ্গে আটক অপর দুজন হচ্ছেন-পূর্বাঞ্চল সীমান্তের মাদক চোরাকারবারি, চিহ্নিত আদম পাচারকারী এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হান্নান মিয়া (৪০) ও তার সহযোগী ধলেশ্বর গ্রামের নাঈম চৌধুরী (৩০)।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের চকবাজার, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ অন্তত তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম নুরু হত্যার ঘটনাটি ছিল আলোচিত। ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ নুরুকে নগরীর চকবাজার এলাকার বাসা থেকে মধ্যরাতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ৩০ মার্চ রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদী তীরের খেয়াঘাট এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতনের পর মাথায় গুলি করে হত্যার পর লাশ ফেলে দেওয়া হয়। ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশেই শুধু ছাত্রদল করার অপরাধে নুরুকে অপহরণ করার পর হত্যা করা হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন তার স্ত্রী সুমি আক্তার। স্বামী খুন হলেও থানায় কোনো মামলা করার সুযোগ পাননি। দীর্ঘ ৭ বছর পর এসে স্বামী হত্যার বিচার পেতে ১ সেপ্টেম্বর চকবাজার থানায় মামলাটি করেন সুমি।
এর আগে ১৯ আগস্ট সিরাজ উদ্দৌলা নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে ফজলে করিম চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার ইন্ধন দেয়ার অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হয়েছে।
অভিযোগ আছে, চট্টগ্রামের রাউজানে অত্যন্ত দাপটশালী এমপি ছিলেন ফজলে করিম চৌধুরী। রাউজানে গত ১৫ বছর ধরে তার কথার ওপর কেউ কথা বলতে পারেননি। পুরো প্রশাসন ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। দলীয় ক্যাডারদের পাশাপাশি প্রশাসনকে দিয়ে তিনি হত্যা, গুমসহ অনেক অপকর্ম করিয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া কিংবা নির্বাচনে তার কথার বাইরে কোনো প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করেছিলেন তিনি। কথা না মেনে কেউ নির্বাচন করে যদিও জয়ী হন তাকে এলাকায় যেতে না দেওয়ার নজিরও সৃষ্টি করেন তিনি। সর্বোপরি রাউজানে তিনি কায়েম করেছিলেন ‘রামরাজত্ব’। সরকার পতনের পর ফজলে করিম আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এলাকার মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। তার আটকের খবরেও রাউজানে নেমে এসেছে স্বস্তি।
জানা গেছে, আত্মগোপন অবস্থা থেকে বুধবার মধ্যরাতে তিনি রাজধানী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে ভাড়া গাড়িতে রওয়ানা দেন। আখাউড়া সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুরের ফকিরমোড়া গাজীর বাজার এলাকায় বিজিবির হাতে আটক হন তিনি। গণমাধ্যমকে ফজলে করিম বলেন, ভারতে তিনি চিকিৎসার জন্য যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তার সঙ্গে যে দুজনকে আটক হয়েছেন তাদের তিনি চেনেন না। কাউকে কোনো টাকাও দেননি।
রাঙ্গুনিয়ায় মিষ্টি বিতরণ : ফজলে করিম চৌধুরী আটক হওয়ার খবরে রাঙ্গুনিয়ায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার রোয়াজারহাট বাজারে মিষ্টি বিতরণ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা পথচারী, দোকানদার, যানবাহন চালকসহ বিভিন্ন সাধারণ মানুষের হাতে মিষ্টি তুলে দেন। এ সময় জেলা ছাত্রদল নেতা ফারুকুল ইসলাম ছাড়াও যুবদল নেতা মো. দিদার আলম, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাসেদুল ইসলাম, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব রানা, শাহেদুল ইসলাম ইফাক, লিয়াকত, স্বেচ্ছাসেবক দলের শাহেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরএ//