প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, বিশেষ করে স্বাধীনতা পুরস্কার, জীবিত অবস্থায় প্রদানের নিয়ম করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যেন এমন একটি নিয়ম করতে পারি, যেখানে মরণোত্তর পুরস্কারের প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে শুধুমাত্র জীবিত ব্যক্তিদেরই সম্মাননা প্রদান করা হবে।’
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ বছর মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন পপসম্রাট আজম খান (মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান)। তাঁর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর কন্যা অরনী খান। তিনি অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গর্বিত, তবে তিনি যদি জীবিত অবস্থায় এই সম্মাননা পেতেন, তাহলে আমাদের আনন্দ আরও বেশি হতো।’
অরনী খান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের যথাযথ সম্মান দেওয়া হোক।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মরণোত্তর পুরস্কার যতটা সম্মানজনক, তার চেয়ে বেশি মূল্যবান জীবিত অবস্থায় প্রাপ্ত সম্মাননা। জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিরা যদি জীবদ্দশায় এই স্বীকৃতি পান, তবে সেটিই প্রকৃত সম্মান।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। কিন্তু এখনো সে লক্ষ্য পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত এবং দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও নিপীড়নের শিকার।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘তাদের আত্মত্যাগ আমাদের “নতুন বাংলাদেশ” গড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ আমরা নষ্ট হতে দেব না।’
এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারে সাতজন মনোনীত হন, যার মধ্যে লেখক বদরুদ্দীন উমর ছাড়া বাকিরা মরণোত্তর পুরস্কার পেয়েছেন। বদরুদ্দীন উমর পুরস্কার গ্রহণ না করায় তাঁর রেপ্লিকা জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন।
মরণোত্তর পুরস্কারপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ছিলেন বিজ্ঞানী অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের কন্যা সাদাফ সায সিদ্দিকী, কবি আল মাহমুদের কন্যা আতিয়া মীর, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের ছেলে শামেরান আবেদ, আজম খানের কন্যা অরনী খান এবং বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন।
সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে আসছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের পাঁচ লাখ টাকা, স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৩২টি প্রতিষ্ঠান ও ৩২৪ জন ব্যক্তি এই পুরস্কার পেয়েছেন।