দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)—এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ এবং আইইইই কম্পিউটার সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টার —এর আয়োজনে প্রথমবারের মতো হাবিপ্রবিতে অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী (১৮ ও ১৯ জুলাই) “আইইই সিএস বিডিসি সামার সিম্পোজিয়াম ২০২৫”।
সিম্পোজিয়ামে দেশের সরকারি—বেসরকারি ৬০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম এবং প্রায় ৫০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। দেশের সম্ভাবনাময় আইটি খাতকে ঘিরে এমন বড় পরিসরে আলোচনা ও অংশগ্রহণের সুযোগ হাবিপ্রবিতে এবারই প্রথম। সম্মেলনের আলোচনায় উঠে আসে মেধাবীদের দক্ষ করে তুলতে হলে কারিকুলাম হালনাগাদ, ইন্ডাস্ট্রির—অ্যাকাডেমিয়া সংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুদিনের সিম্পোজিয়ামে ৩৪ টি টেকনিক্যাল সেশন, ৪ টি কিনোট সেশন, ১ টি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়।
আজ সকাল ১১ টায় অডিটোরিয়াম—২ তে সিম্পোজিয়ামের দ্বিতীয় দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা।
গেস্ট অব অনার ও টেকনিক্যাল সেশনের রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি এর উপাচার্য প্রফেসর ড. এ বি এম শওকত আলী, গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন এবং গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি এর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার, ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির এবং আইইইই সিএস বিডিসি’র সভাপতি এবং কুয়েট এর প্রফেসর ড. কে. এম. আজহারুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএসই অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মো. দেলোয়ার হোসেন।
উক্ত অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ইসিই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজিনা সুলতানা।
এ সময় গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি এর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, আমি আজ এখানে রিসোর্স পার্সন হিসেবে এসেছি, আপনারা দেখেছেন এখানে ৪ জন রিসোর্স পার্সনের মাঝে ৩ জনই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস—চ্যান্সেলর। এখান থেকে আমরা বুঝলাম ভাইস—চ্যান্সেলররা শুধু প্রশাসকই নন তারা ভালো গবেষকও বটে। নতুন বাংলাদেশে আমরা এটাই দেখতে চাই, যেখানে ভাইস—চ্যান্সেলররা একাডেমিয়া ও গবেষণার নেতৃত্ব দেবেন।
গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, এই সিম্পোজিয়াম যখন ২০২১ সালের দিকে যাত্রা শুরু করে তখন আমরা ১০০ এর নিচে পেপার পেতাম, সেখানে এই বছর আমরা এক্সট্রা অর্ডিনারি সাফল্য পেয়েছি, ৫০০ এরও বেশি পেপার রিসিভ করেছি। আগে যেখানে একটা দুইটার বেশি কনফারেন্স বাংলাদেশে হতোনা, এখন সেখানে ২০ টিরও অধিক কনফারেন্স হয়। এর থেকে প্রমাণিত হয় আমাদের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা গবেষণার দিকে ধাবিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি এর উপাচার্য প্রফেসর ড. এ বি এম শওকত আলী বলেন, এখন জুলাই মাস চলছে, গত বছরের জুলাই—আগস্টের আন্দোলনে অনেকেই শহীদ হয়েছেন, তাঁরা বেঁচে থাকলে আজ হয়তো এখানে উপস্থিত থাকতেন, বিশেষ করে সে আন্দোলনে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের একজন শিক্ষার্থী শহীদ হোন। আমি তাঁদের সকলের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি বলেন, আমরা অনেক পেপার পাচ্ছি, কিন্তু এখন আমাদের দরকার প্রোডাক্ট। কারণ প্রোডাক্টটাই ব্রান্ড হিসেবে কাজ করবে। আমার ইনভেস্টমেন্ট দরকার নেই, আমাদের হাতে যে ডিভাইস টা থাকে এটি দিয়েই গবেষণা করা সম্ভব। বর্তমান যুগে সকলেই হাতেই স্মার্ট ফোন থাকে, এটাকেই ব্যবহার করুন। পরিশেষে এ ধরণের সিম্পোজিয়াম সুন্দরভাবে আয়োজনের জন্য তিনি হাবিপ্রবির ভাইস—চ্যান্সেলর, সিএসই অনুষদ ও আইইইই সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা বলেন, জুলাই মাসের আজকের দিনে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ সন্তান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ, দিনাজপুরের রাহুল ইসলাম ও রুদ্র সেনদের,
যাঁদের রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, একইসাথে গত বছরের জুলাই—আগস্টে প্রায় দুই হাজার ছাত্র—জনতা তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, অনেকে আহত হয়ে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন, আমি তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই গণঅভ্যুত্থান বিশ্বে বিরল। তাই বাংলাদেশে এখন বৈষম্যের কোন স্থান নেই, এখানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান। তিনি বলেন, হোস্ট হিসেবে এ ধরণের সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা অবশ্যই সম্মানের। এই সিম্পোজিয়ামের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সকল ধরণের সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করেছি। এ ধরণের আয়োজন শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য উৎসাহিত করে। আমি এখনও নিজেকে একজন শিক্ষার্থী মনে করি এবং গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করি। পরিশেষে এ ধরণের বড় একটি সিম্পোজিয়াম সুন্দরভাবে আয়োজনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বিকেল ৪.৩০ টায় উক্ত সিম্পোজিয়ামের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।