রুশাইদ আহমেদ: বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনার লক্ষ্যে সম্প্রতি পুনর্গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং দেশের ১০টি প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আদালতের মাধ্যমে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ শেয়ার এবং বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা জব্দ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ৮৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আয়োজিত টাস্কফোর্সের সপ্তম সভায় এসব তথ্য উপস্থাপন করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি পাচারকৃত অর্থ দ্রুত ফেরত আনতে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর জোর দেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী এক কর্মকর্তা জানান, এই টাস্কফোর্স অর্থপাচার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনা করেছে এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছে।
তদন্তাধীন ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে—এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, নাবিল, সামিট, ওরিয়ন, জেমকন, নাসা, বসুন্ধরা, সিকদার ও আরামিট গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তাদের প্রধানদের ব্যক্তিগত সম্পদ, ব্যাংক হিসাব এবং বিদেশে অবস্থানের বিষয়েও তদন্ত চলছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব গোষ্ঠীর অনেকেই ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।
টাস্কফোর্সের পুনর্গঠন ঘটে গত সেপ্টেম্বর মাসে, যেখানে সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ৯ জনে নামিয়ে আনা হয়। পূর্ববর্তী টাস্কফোর্সে সদস্য ছিলেন ১৪ জন এবং নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। পুনর্গঠনের পরই অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সিআইডি, এনবিআর ও দুদকের সমন্বয়ে একটি যৌথ তদন্ত দল গঠন করা হয়, যার কেন্দ্রীয় সমন্বয় করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
তদন্তের অংশ হিসেবে সম্প্রতি গভর্নর আহসান এইচ মনসুর যুক্তরাজ্য সফর করেন। প্রেস অফিসের বিবরণ অনুযায়ী, তিনি সেখানে সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কৌশল এবং সহায়তা।
লন্ডনের তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গভর্নরের সঙ্গে আলোচনায় জানিয়েছে, তারা যদি যথেষ্ট প্রমাণ পায়, তাহলে ৫ কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। তারা বাংলাদেশের সম্পদ উদ্ধারে আইনগত সহায়তা এবং তদন্ত কাজে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গভর্নর তাঁদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যাতে তারা সরাসরি মামলা পর্যালোচনা করতে পারে।
এই উদ্যোগের ফলে দেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।