হৃৎপিণ্ড বা হৃদযন্ত্র যা আমাদের শারীরিক সত্তার কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়। কোনো কারণে হার্ট রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দিলে তার একমাত্র ফলাফল মৃত্যু। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে শুধুমাত্র হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে আড়াই লাখ মানুষ মারা যান। সুতরাং শরীরের অন্যান্য যেকোনো অঙ্গের চেয়ে হার্টের যত্ন নেয়া অধিক জরুরী। অন্যদিকে সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘ ও পরিপূর্ণ জীবনের জন্য এর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার হৃদয়কে দীর্ঘজীবী করার জন্য বেশকিছু নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে।
যার প্রথমেই একটি পরিপূর্ণ খাদ্যাভাসে জীবনকে অভ্যস্থ করতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য একটি সুস্থ হার্টের ভিত্তি গঠন করে। প্রচুর ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন বাদাম, তৈল জাতীয় ফল এবং সয়াবিন তেলের পরিবর্তে অলিভ অয়েলে রান্না করা খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং রক্তচাপ বজায় রাখে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট, কোলেস্টেরল এবং সোডিয়াম গ্রহণ যতটা কমিয়ে আনা যায় হার্টের পক্ষে দীর্ঘদিন কাজ করা ততই সহজ হবে।
খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি একটি সুন্দর জীবনযাপন করার জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা একান্ত প্রয়োজন। শারীরিক কার্যকলাপ কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। সপ্তাহে দুই বা ততোধিক দিনে শক্তি প্রশিক্ষণ ব্যায়ামের সাথে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিটের মাঝারি অ্যারোবিক ব্যায়াম বা ৭৫ মিনিট জোরালো ব্যায়ামের লক্ষ্য রাখুন। ব্যায়াম রক্তচাপ কমাতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরেগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন শুধুমাত্র হৃদপিন্ড নয় বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ। তাই একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়ামের সাথে একটি সুষম খাদ্য একত্রিত করে, আপনি একটি স্বাস্থ্যকর ওজন অর্জন এবং বজায় রাখতে পারেন, আপনার হৃদয়ের উপর চাপ কমাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারেন।
স্ট্রেস এর ক্ষেত্রগুলো জানুন এবং নিয়ন্ত্রণ করুন। কাজের চাপ, অর্থনৈতিক অসঙ্গতি, কিংবা যেকোনো ধরণের চাপ হৃদপিন্ডের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী চাপ উচ্চ রক্তচাপ এবং অত্যধিক খাওয়া বা ধূমপানেরমতো অস্বাস্থ্যকর মোকাবেলার পদ্ধতির মাধ্যমে হৃদরোগে ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর কৌশলগুলি অনুশীলন করুন যেমন মননশীলতা, ধ্যান, যোগব্যায়াম বা শখ অথবা এমন যেকোনো কিছু যা আপনাকে প্রশান্তি দেয়।
অন্যান্য খারাপ অভ্যাসের মধ্যে ধূমপান হৃদরোগের একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ। আপনি যদি ধূমপান করেন, তাহলে আপনার হৃদয়ের জন্য আপনি যা যা করতে পারেন, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সেসব জিনিসগুলির মধ্যে সেরা। এতে সফল হতে বন্ধু, পরিবার বা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কাছ থেকে সহায়তা নিতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুম যেমন শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে তেমনি যেকোনো রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়ার ক্ষেত্রেও ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অনেক। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম হার্টের স্বাস্থ্য সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। প্রতি রাতে ৭—৯ ঘন্টা মানসম্পন্ন ঘুমের লক্ষ্য রাখুন। খারাপ ঘুম উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসে অবদান রাখতে পারে, যা সবই হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ।
হার্টের সমস্যা ছাড়াও অন্য শরীরের অন্যকোনো সমস্যা আছে কিনা তা জানার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য করুন। আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর নিয়মিত পরিদর্শন আপনার হার্টের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ করতে সাহায্য করতে পারে। তারা আপনার রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যক লক্ষণগুলি পরীক্ষা করে যেকোনো সম্ভাব্য সমস্যাকে তাড়াতাড়ি ধরতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করেন।
শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির নিয়মি যত্ন নিন। আপনার হৃদয়ের যত্ন নেওয়ার সাথে সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। একটি সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, তামাক পরিহার, পরিমিত অ্যালকোহল গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম পাওয়া, নিয়তমিত চেক—আপ, হাইড্রেটেড থাকা এবং আপনার পারিবারিক ইতিহাস জানা সহ একটি হৃদয়—স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করে হার্টের যেকোনো সমস্যার ঝুঁকি কমাতে পারেন এবং সুস্থ হৃদয় নিয়ে একটি দীর্ঘ জীবন উপভোগ করতে পারেন।