অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ১০ মাস পার হলেও গত বছরের ৫ আগস্ট থানার গুদাম থেকে লুট হওয়া বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদের বেশিরভাগ এখনো উদ্ধার হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।
র্যাব ও পুলিশের অভিযানে জানা গেছে, চুরি হওয়া এসব অস্ত্র ও গুলি পৌঁছে গেছে রিকশাচালক, দোকানি এমনকি সাধারণ পথচারীর হাতেও। কেউ কেউ এগুলো বিক্রির চেষ্টা করেছেন, যা নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য বড় হুমকি।
ঢাকার ইব্রাহীমপুরে এক গ্যারেজে রিকশা চালাতেন নশা মিয়া নামে এক চালক। ১৯ মার্চ মোহাম্মদপুরে গুলি বিক্রি করতে গিয়ে তিনি র্যাবের হাতে আটক হন। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৯ এমএম পিস্তলের ১০ রাউন্ড গুলি, যেগুলো ৫ আগস্ট কাফরুল থানা থেকে লুট হয়েছিল। তার গ্রেপ্তারে চমকে উঠেছে স্থানীয়রাও। র্যাব পরে তার কর্মস্থলে অভিযান চালালেও সেখানে কিছু মেলেনি।
এছাড়া ৯ মে রাজধানীর বছিলা এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকসহ ২৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে র্যাব-২। গ্রেপ্তার হওয়া মাইক্রোবাস চালক সাগর হোসেন দাবি করেন, তিনি থানা সংলগ্ন এলাকা থেকে গুলিগুলো কুড়িয়ে পেয়েছিলেন।
র্যাব জানিয়েছে, কেবল অপরাধী নয়, বরং সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও উদ্ধার হচ্ছে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র-গুলি। যারা সেগুলো জমা না দিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দিচ্ছেন, তারা আইন ভঙ্গ করছেন।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক মো. খালিদুল হক হাওলাদার স্পষ্ট করে বলেন, কোনোভাবে পাওয়া এসব অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর না করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুসারে, লুট হওয়া ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্রের মধ্যে ৪ হাজার ৩৭০টি উদ্ধার করা হয়েছে। ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১টি গুলির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫০৭টি।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর অনুরোধ করেছেন, কেউ যদি লুট হওয়া অস্ত্র বা গুলির ব্যাপারে কোনো তথ্য জানেন, তাহলে যেন পুলিশকে অবহিত করেন। যথাযথ তথ্য পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই দীর্ঘ সময়েও সমস্ত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক। তার মতে, এসব অস্ত্র অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা যেমন বাড়ছে, তেমনি এর বিক্রির মাধ্যমে সমাজে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
যদিও লুট হওয়া অস্ত্র জমা দিতে একাধিক সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তবুও অনেকে তা না করায় পুলিশ জানিয়েছে, এখন যাদের কাছেই এসব অস্ত্র পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।