মাদারীপুরের শিবচরে পাওনা ৪৫০ টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ভ্যানচালক মিজানুর রহমান গাজীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা এবং আসামিদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সহকারী পুলিশ সুপার মো. আজমীর হোসেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শিবচরের উমেদপুর ইউনিয়নের চরকাচিকাটা গ্রামের ভ্যানচালক মিজানুর রহমান গাজী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মালামাল পরিবহনের ভাড়া হিসেবে কেরানীর বাট এলাকার নবীনূর বেপারীর ছেলে আরিয়ান আহমেদ স্বাধীনের কাছে ৪৫০ টাকা পাওনা ছিলেন। এই পাওনা টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলছিল। একপর্যায়ে স্বাধীন ক্ষুব্ধ হয়ে মিজানুরকে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার, স্বাধীন তার বন্ধু হান্নানের মাধ্যমে মিজানুরকে ৫০০ টাকা ভাড়ার লোভ দেখিয়ে কেরানীর বাট বেইলি ব্রিজ সংলগ্ন ভাড়া বাসা থেকে পাঁচ্চর এলাকায় নিয়ে যায়। পরে কৌশলে তাকে কাদিরপুর ইউনিয়নের চর কান্দি গ্রামের একটি ভুট্টাক্ষেতের পাশে নিয়ে আসে, যেখানে আগে থেকেই স্বাধীন ও তার আরেক বন্ধু আল আমিন অপেক্ষা করছিল।
সেখানে পৌঁছানোর পর স্বাধীন প্রথমেই ধারালো ছুরি দিয়ে মিজানুরের গলায় আঘাত করে, এরপর আল আমিন ও হান্নান তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে, যার ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হত্যার পর তারা মিজানুরের ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরদিন, ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে স্থানীয়রা ভুট্টাক্ষেতে মিজানুরের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং সেখানে একটি ধারালো ছুরি, নেশা করার সরঞ্জাম এবং হত্যাকারীদের ব্যবহৃত একটি লাল রঙের জ্যাকেট পায়।
এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে শিবচর থানায় স্বাধীন, আল আমিন ও অজ্ঞাতনামা একজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ তদন্তে নামে এবং শিবচর থেকে কাঁঠালবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫০টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে। এক পর্যায়ে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হত্যার স্থানে পাওয়া লাল রঙের জ্যাকেট পরিহিত হান্নান ভ্যানসহ মিজানুরকে নিয়ে যাচ্ছে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং অন্যান্য সূত্রের ভিত্তিতে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে স্বাধীন ও আল আমিনও জড়িত। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হান্নানকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় এবং সোমবার বিকেলে মাদারীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারকৃত তিন আসামি আদালতে ও পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, যেখানে তারা পুরো হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।