মাঝ রাতে লোকসভায় ওয়াকফ বিল পাশ করা হয়েছে। পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২৮৮ জন সাংসদ এবং বিপক্ষে ২৩২ জন। এখন প্রশ্ন উঠছে, ওয়াকফ বিল পাশ নিয়ে এত তাড়াহুড়ো ও উৎসাহের কারণ কী? জেপিসি কেন এত সক্রিয় ও উদগ্রীব হয়ে উঠল?
কংগ্রেসের সাংসদ গৌরব গগৈ উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে এই বিল প্রথম পেশ করা পর্যন্ত সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে চারটি আঞ্চলিক বৈঠক করেছিল, তবে একবারও ওয়াকফ বিল সংশোধনের সপক্ষে সুপারিশ বা পরামর্শ দেওয়া হয়নি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, সেই সময় এই বিল কে খসড়া করেছিলেন? ওয়াকফ বিল পাশ করা এত জরুরি হয়ে পড়ল কেন? কেন করা হল এত তাড়াহুড়ো?
এই বিল যদি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে বাজেট অধিবেশনের শেষ দিকে বিলটিকে কেন পেশ করা হল? সাংসদরা এই বিল পড়ে দেখার সময় পাননি; সংশোধনী নিয়ে তাঁদের প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার সুযোগ কেন দেওয়া হল না? একেবারে শেষ মুহূর্তে হাউসে এই ইস্যু নিয়ে বিতর্ক উত্থাপন করা হল? কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী কিরেন রিজিজু দাবি করেছেন, এই বিলের সাংবিধানিক বৈধতাকে বহাল রেখেছে একাধিক আদালত, তাই এতে অসাংবিধানিকতার জায়গা নেই।
একজন আইন মন্ত্রী কীভাবে এমন অদ্ভুত মন্তব্য করতে পারেন তা বিস্ময়কর কারণ বিল পাশ হওয়ার পরেই কেবলমাত্র আদালতগুলি বিলের বৈধতা পরীক্ষা করে দেখতে পারে। তিনি আরও দাবি করেন, দেশের অধিকাংশ মুসলিমই এই বিলকে সমর্থন করেন। এটা কি তাঁর দিবাস্বপ্ন?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, বিরোধিরা যখন কক্ষে প্রতিবাদ করতে ব্যস্ত, তখন বাইরে মুসলিমরা উদযাপনে মেতে উঠেছেন। একাধিক সংবাদ সংস্থা, বিশেষ করে এএনআই বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা গেছে, ‘বোরকায় ঢাকা নারীরা’ এই বিলের সমর্থনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।
তবে, লোকসভায় এই বিল পাশ হয়ে গেলেও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড দেশের প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে এবং সমগ্র ভাবে এই বিলকে ‘খারিজ’ করে দিয়েছে। এই বিলকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তারা। সেই সঙ্গে আসন্ন সময়ে দেশজোড়া বিক্ষোভ শুরুর আহ্বান জানিয়েছে। মাওলানা কলবে জাওয়াদ বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ভিডিওর ওই ‘বোরকা-ঢাকা নারীরা’ আদৌ মুসলিম তো?
জেপিসির রিপোর্টেই স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই বিলের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন নিয়ে সরকার যে দাবি করছে তা সত্য নয়। জেপিসি দাবি করেছে, তারা ৯২.৮ লাখ মতামত যাচাই-বাছাই করেছে, তবে সেই তথ্য সরকারি ডোমেইনে নেই। কমিটির কাছে জমা দেওয়া ৭৫৩টি স্মারকলিপির সারাংশের কথা উল্লেখ করেছে জেপিসি নিজেই; এগুলির মধ্যে ৮২ শতাংশই এই বিলকে তীব্র ভাবে বিরোধিতা করেছিল।
জেপিসির রিপোর্ট স্বয়ং দাবি করেছে, ৭৫৩টি স্মারকলিপির মধ্যে মাত্র ১০২টি সংশোধনীকে সমর্থন জানিয়েছিল, অন্য দিকে ৫১৬টি স্মারকলিপি এই বিলের সমালোচনা অথবা বিরোধিতা করেছিল। এই বিলের বিরোধিতায় ব্যাপক সংখ্যক মতামত থাকা সত্ত্বেও জেপিসির সুপারিশ করা প্রায় ২৮টি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়েছে। পেশ করা ৪৪টি সংশোধনীর মধ্যে মাত্র একটিকে বাদ দিয়েছে কমিটি।