আমি গণভবন থেকে বলছি, আপনার মনোনয়নের ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা আছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী হিসেবে আপনাকে দলের তহবিলে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে। টাকা প্রস্তুত রাখবেন। যেকোনো মুহূর্তে দলের তহবিলে টাকা জমা দিতে বললে তাৎক্ষণিকভাবে জমা করে দেবেন। টাকা জমা দেওয়ার পর আপনার মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে।’ মুঠোফোনে একজন সংসদ সদস্যকে এ কথা বলেন মো. ইয়াছিন নামের এক ব্যক্তি। ওই সংসদ সদস্য এ বছরও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কল দিয়ে এমন আশ্বাস দিতেন বাবা এবং মেয়ের সমন্বয়ে গড়ে তোলা একটি প্রতারক চক্র। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জন করতে তারা নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের বিভিন্ন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি এক মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ফোন করে ২০ কোটি টাকা রেডি রাখতে বলে চক্রটি।
মনোনয়নের জন্য দলের তহবিলের জন্য ২০ কোটি টাকা চাওয়ার নিয়ে ওই সংসদ সদস্যের সন্দেহ হলে তিনি আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে বিষয়টি জানান। তখন ওই কেন্দ্রীয় নেতা বুঝতে পারেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) বলেন তিনি।
পরে ওই মনোনয়নপ্রত্যাশীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নোয়াখালী থেকে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। তারা হলেন- মো. ইয়াসিন এবং তার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাদের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের রেকর্ড পাওয়া গেছে। তাদের রিমান্ডে এনে এই চক্রে অন্য যারা জড়িত তা জানার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণা করার কৌশল বিষয়েও তথ্য পেয়েছি। প্রতারকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নামে নম্বর ট্রু-কলারে সেভ করে বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করে। কিন্তু যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ একজন প্রার্থীকে নমিনেশন দেয়ার আগে কয়েকটি ধাপে যাচাই-বাছাই করা হয়। ট্রু-কলারে নাম সেভ করা দেখে কল পেলেই টাকা দিয়ে নমিনেশন পাবেন এটা এত সহজ না। তাদের সাবধান হতে হবে।