বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা ও রূপের রানি খ্যাত রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য একেক ঋতুতে একেকরকম। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক,গহীন অরণ্য,পাহাড়ি প্রকৃতির রূপ পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয়। তাই দেশ-বিদেশ থেকে শত শত পর্যটক প্রতিনিয়ত আসেন প্রকৃতির এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
রাঙ্গামাটি শহরটি চট্টগ্রাম থেকে ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । রাঙ্গামাটি দেশ বিদেশের সকল মানুষের কাছে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। কারণ এই শহরে প্রাকৃতিক দৃশ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, হ্রদ,উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগৎ, দেশীয় যাদুঘর, ঝুলন্ত সেতু ইত্যাদি রয়েছে।
রাঙ্গামাটিতে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তেমনই অনন্য এক দর্শনীয় স্থান ‘ফুরোমন পাহাড়’। এ পাহাড় রাঙ্গামাটি জেলার সর্বোচ্চ পাহাড়। এ পাহাড়ে উঠার আঁকাবাঁকা রাস্তা আপনাকে বিস্মিত করবেই।
রাঙ্গামাটি শহরের অদূরে ফুরোমন পাহাড়ের অবস্থান। চাকমা ভাষায় ফুরোমনের অর্থ ফুরফুরে মন। এ পাহাড়ের চূড়ায় মন ফুরফুরে হয়ে যায় বলে পাহাড়ের নাম ফুরোমন। পাহাড়টির উচ্চতা ১ হাজার ৫১৮ ফুট। চূড়ায় দেখা যায় অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পুরো রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ি বাঁক, খাড়া পাহাড়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৬০০ ফিট উঁচুতে প্রায় ৪০০ ধাপ খাড়া সিঁড়ি বেয়ে পেয়ে যাবেন এক সমুদ্র নির্জনতা।
ফুরোমন পাহাড় জয় করার লক্ষ্যে আমরা কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে রাত ৩ টা ৩০ মিনিটে রাঙ্গামাটি শহর থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে রওয়ানা দেই। রাঙ্গামাটি শহর থেকে সিএনজি করে সহজেই যাওয়া যায় ফুরোমন পাহাড়ে। ভাড়া পড়বে রির্জাভ ৪০০-৫০০ টাকা। সাপছড়ি নামক স্থানে আমাদের সিএনজি থেকে নামিয়ে দেয় ৪টা ১০ মিনিটে। গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা ধরেই মোবাইলের ফ্লাশের আলোর সাহায্যে হাঁটা শুরু করি। যাওয়ার পথে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু রাস্তা অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেয়। প্রায় ঘন্টাখানেক হাঁটার পর আমরা পৌঁছে যাই ফুরোমন পাহাড়ের চূড়ায়।
সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশে মেঘের মিলন ঘটে ফুরোমন পাহাড়ে। চারিদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক, প্রজাপতির স্বাধীন ছুটে চলা, বুনোপোকাদের ব্যস্ততা, হাজার বছরের পাতাঝরা গাছের উত্তোলিত আহ্বান, সামনে সবুজে ঘেরা পুরো রাঙ্গামাটি জেলা, অপার সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে আর কী লাগে। এখানে প্রতিটি মুহুর্তে বাতাসের সুর এবং নীরবতা বিরাজ করে।
ফুরোমন পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যতদূরে চোখ যাবে দেখবেন সবুজের সমারোহ। বিশাল কাপ্তাই লেকের নীল জলরাশি, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রাঙামাটি শহর। এখান থেকে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের ঈর্ষণীয় রূপ দেখা যায়।
ফুরোমন পাহাড়ের শিরাস্থানে অবস্থিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি স্থায়ী ক্যাম্প এবং একটি বৌদ্ধ মন্দির।মনে হয় যেন, এখানে একটি অদ্ভুত প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে যেন গৌতম বুদ্ধ নীরবভাবে বসে আছেন। এই পাহাড়ের চূড়া হলো একটি অপূর্ব স্থান, যেখানে বাস্তবায়িত ও ধার্মিক দুটি অংশ একসাথে রয়েছে। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পটি একটি সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে বাংলাদেশের সামরিক সহায়তা প্রদান করছে, যেখানে বৌদ্ধ মন্দিরটি একটি ধার্মিক নিখোঁজপূর্ণ স্থান। এই দুটি স্থানের সমন্বয়ে একটি অদ্ভুত মেলানো হয়েছে, যেখানে প্রাকৃতিক এবং মানবিক পরিবেশ একসাথে সমন্বিত হয়ে উঠেছে। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় শুষ্ক মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে এখানে যাতায়াত করা কষ্টকর।
ফুরোমন পাহাড়ের উপরে কোন খাবারের দোকানপাট না থাকায় পাহাড়ে চড়ার আগেই আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং খাবার নিয়ে উঠেছিলাম। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে এমন সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে সকালের নাস্তা করাটা অন্যরকম অনুভূতি ছিলো। পাহাড়ের চূড়ায় সবাই মিলে আমরা আড্ডা ও গানে মেতে উঠি।
পাহাড় ও মেঘের সৌন্দর্য উপভোগ করে আমরা সকাল ৮ টায় শহরের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়ে দেই। ফুরোমন পাহাড়ের সৌন্দর্য আমাকে এতোটাই বিমোহিত করেছে যে আরো বহুবার যেতে ইচ্ছে করছে।