প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল শরিকরা। আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে শরিক দলগুলো। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কয়েকদিনের কার্যক্রম দেখে পরবর্তী অবস্থান ও সিদ্ধান্ত পরিষ্কারের কথা জানিয়েছেন শরিক নেতারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপিসহ সব পর্যায়ের নেতা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর ১৪ দল শরিকরা এই মুহূর্তে কোন অবস্থানে আছেন–তা নিয়েও রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এমন প্রশ্নে গত দু’দিনে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের কমপক্ষে ১০ জন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। এ আলোচনায় শরিক দলের নেতারা আপাতত সতর্ক অবস্থানে থেকে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যক্রম দেখে নিজেদের অবস্থান জানানোর কথা বলেছেন।
সূত্র মতে, ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, মহাসচিবের অসুস্থতার কারণে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ আলী ফারুকী, জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে সিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসীত বরণ রায়সহ সিংহভাগ নেতাই সোমবার দুপুরের পর থেকে এখনও ঢাকার বাসায়ই অবস্থান করছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা সোমবার থেকে রাজশাহীর নিজ বাসভবনে রয়েছেন। শুধু জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দেশ ছেড়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে তিনি ঠিক কোন দেশে গিয়েছেন, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে, ১৪ দলের পক্ষ থেকে আপাতত গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শরিক নেতারা। সমকালের সঙ্গে আলাপকালে শরিক নেতারা নিজেদের নাম প্রকাশের অনিচ্ছাও দেখিয়েছেন। অবশ্য দু-একটি শরিক দল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছে। গত বুধবার ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত শত শহীদের রক্তস্নাত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিজয়কে অভিনন্দিত করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণের পর ‘স্বাগত’ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক
শিরীন আখতার।
অন্য কয়েকজন নেতা বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সর্বশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকার গঠনসহ নানা প্রশ্নে আওয়ামী লীগের অবহেলা ও অবমূল্যায়নে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভ ছিল। তারপরও শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষেই ছিলেন তারা। তবে আপাতত পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।