জবি প্রতিনিধি
★ কেমিক্যাল স্টোর রুমে অনাকাঙ্ক্ষিত আগুন লাগার আশঙ্কায় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা
★ দ্রুত ল্যাব ইন্সট্রাক্টর নিয়োগের আশ্বাস উপাচার্যের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফার্মেসি বিভাগ নানামুখী সংকট নিয়ে পার করছে। শ্রেণিকক্ষ সংকট, ল্যাব সংকট সহ কেমিক্যাল স্টোর রুমে নিরাপত্তা কর্মকর্তা নেই এই বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দেড় দশক পার হলেও নেই কোন ল্যাব ইন্সট্রাক্টর।
এদিকে সম্প্রতি বিভাগটি পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন সংকট ও কার্যক্রমে ত্রুটি দেখতে পায় বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল। পরে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ল্যাব সংকট, ল্যাব ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগ ও শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধিসহ অর্গানোগ্রামের শর্তাবলি পূরণ করে ফার্মেসি কাউন্সিলে রিপোর্ট পাঠাতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। অন্যথায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বি-ফার্ম কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে বলেছে। ফলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনাময় এ বিভাগটি নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের ৪র্থ তলায় অবস্থিত ফার্মেসি বিভাগ। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভাগটিতে ফাংশনিং ল্যাব রয়েছে ২ টি এবং প্রক্রিয়াধীন ১টি। যার মধ্যে একটিতে পূর্ণাঙ্গ সরঞ্জামাদি রয়েছে। অন্যটিতে কিছু সরঞ্জাম ও গ্যাস লাইনের সুবিধা নেই। ফলে ১ টি ল্যাবে শিক্ষার্থীদের কাজ করতে দেখা যায়। ল্যাবের পাশেই কাচের পার্টিশনে রয়েছে কেমিক্যালের স্টোর রুম। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য লক্ষ টাকার কেমিক্যাল এবং কেমিক্যালের কার্টুনগুলো এলোমেলোভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কেমিক্যালে দাহ্য পদার্থ থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ল্যাব ইনস্ট্রাক্টর নেই একজনও, এমনকি পদটিও সৃষ্টি করা হয়নি এখনো। ফলে ল্যাব থেকে যথাযথ কার্যকরী শিক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ফার্মেসি কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগে ৭ ল্যাব, ৪টি শ্রেণিকক্ষ থাকা শর্ত। কিন্তু বর্তমানে ল্যাব চলমান রয়েছে ২ টি এবং শ্রেণিকক্ষ ৩ টি। জানা যায়, ২০০৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী বিভাগটি চালু হয়। ৬ টি ব্যাচে শিক্ষার্থী রয়েছেন মোট ২৪০ জন। ১৮ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে ৬ জন রয়েছেন।
পর্যাপ্ত জায়গা না পাওয়ায় ল্যাব, শ্রেণিকক্ষ সহ নানা সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমাকে জায়গা দিন, আমি ল্যাব চালু করছি, শ্রেণিকক্ষ বাড়াচ্ছি। আপনারা স্পেস না দিলে আমি কিভাবে কোথায় সংকট সমাধানের চেষ্টা করবো? ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নতুন ক্যাম্পাসে আমার ডিপার্টমেন্টের জন্য যা যা লাগবে সে চাহিদা দিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ফার্মেসি বিভাগের সাথে একই ফ্লোরে আরও দুটি বিভাগ রয়েছে। বিভাগের সমস্যা সমাধান করতে হলে পুরো ফ্লোরই ফার্মেসি বিভাগের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। তাছাড়া ল্যাব ইনস্ট্রাক্টর না থাকায় অনেকটা নিরাপত্তা হীনতায় থাকতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি একজন ল্যাব ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগ দেওয়া। এছাড়া ফার্মেসি কাউন্সিলের নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং পেশাগত জীবনে সমস্যায় সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, প্রতিটি ল্যাবে ল্যাব ইন্সট্রাক্টর এবং কেমিক্যাল স্টোর রুমে নিরাপত্তা কর্মকর্তা খুবই প্রয়োজন বিভাগের জন্য। আমরা একাধিক বার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে নিরাশ হতে হয়েছে। ফার্মেসি কাউন্সিলের আরোপিত সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তথা ফার্মেসি বিভাগের জন্য লজ্জাজনক বলে তিনি মনে করেন।
বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ বলেন, এতো অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সব শর্ত পূরণ করা অসম্ভব। তবে আমরা সংকট সমাধানে ৩য় ল্যাবের কাজ পক্রিয়াধীন রেখেছি। শিক্ষার্থীদের সেমিনার কক্ষ চালু করেছি। আর দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ল্যাব ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি, তবে এখনো নিয়োগ হয়নি।
মো. জুনায়েত শেখ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়