মানসম্মত প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি চর্চা নিষিদ্ধ, নকলের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন, সেমিস্টার পদ্ধতি বাতিল করে ইয়ার পদ্ধতিতে মূল্যায়নসহ ১৪ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. খন্দকার তৌহিদুল আনম, বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলসহ বিভাগের আট জন শিক্ষক এবং শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (২৪ আগষ্ট) বেলা ১১টায় মীর মোশাররফ ভবনে বিভাগটির করিডরে এ আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় ১৪ দফা দাবি তুলেন তারা।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো-ক্লাস, পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক ছুটি, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশের তারিখ উল্লেখ্যপূর্বক একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে। ১৫ দিন পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক ছুটিসহ ৪ মাসের মধ্যে সেমিস্টার শেষ করে নির্দিষ্ট সময়ে ফলাফল প্রকাশ করে সেশনজট নিরসন করতে হবে। মিডটার্ম পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্ত পরীক্ষার পূর্বেই নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দিতে হবে। পরীক্ষার হলে ‘নকল’ এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ কোর্স বাতিল করে অপ্রয়োজনীয় বোঝা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে হবে। প্রায়োগিক শিখন নিশ্চিত করে বিজেএস ও বার কাউন্সিলের প্রশ্ন অনুসরণ করে মানসম্মত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে হবে এবং উত্তরপত্র নির্ধারিত সময়ে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে শিক্ষকদের কোর্স পুনঃবণ্টন করতে হবে। মান্ধাতা আমলের শিটভিত্তিক লেকচার বন্ধ করতে হবে। রিটেক ও ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষা স্ব-স্ব ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশের পরে আয়োজন করতে হবে। বিভাগের জন্য একটি ফেসবুক পেইজ তৈরী করতে হবে যেখানে বিভাগের কার্যক্রম ও গুরুত্বপূর্ণ নোটিশ প্রকাশ করা হবে। বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি চর্চা নিষিদ্ধ করতে হবে এবং অতিশীঘ্রই আইন বিভাগে ছাত্র-সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সকল ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে মাসে অন্তত একটা করে হলেও উম্মুক্ত মিটিংয়ের আয়োজন করতে হবে। প্রতি বছর অবশ্যই বড় পরিসরে নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায়ের আয়োজন করতে হবে এবং কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার আয়োজন করতে হবে। বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী যারা আইন বিষয়ের বিভিন্ন পেশায় সফলতার সাথে কাজ করছেন তাদেরকে অতিথি করে ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট সেমিনার আয়োজন করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা নিরসনপূর্বক নতুন প্রভাষক নিয়োগ দিতে হবে।বিভাগের সাথে সম্পর্কিত দিবসগুলোতে যেমন মানবাধিকার, লিগাল এইড, ভূমি সেবা ইত্যাদি দিবসগুলোতে সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি আয়োজন করতে হবে। আইন বিভাগের ডিবেটিং সোসাইটি ও মুট কোর্ট সোসাইটির অনুমোদন নিয়ে টালবাহানা বন্ধ করে দ্রুততম সময়ে অনুমোদন ও আনুষ্ঠানিক ভাবে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ইমার্জেন্সি দুরারোগ্য চিকিৎসা সহায়তার জন্য ডিপার্টমেন্ট থেকে স্ব-উদ্যোগে ফান্ড গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভাগের অ্যালামনাইদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ক্লাসরুমে এসি, প্রজেক্টর, সচল বৈদ্যুতিক সংযোগ, নিয়মিত ওয়াশরুম পরিষ্কার ইত্যাদি সংস্কার করতে হবে। সেমিনারে দ্রুত গতির ইন্টারনেট, কম্পিউটার মেরামত এবং ব্যবহার সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। শীঘ্রই সেমিস্টার পদ্ধতি বাতিল করে ইয়ার পদ্ধতিতে ফিরতে হবে। শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের এবং ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাবৃন্দের সর্বদা মার্জিত আচরণ বজায় রাখতে হবে, অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ বিপরীতক্রমে শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রতি শিক্ষার্থীসুলভ মার্জিত আচরণ বজায় রাখতে বদ্ধ পরিকর থাকবে৷
কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা কোন শিক্ষার্থীকে অযৌক্তিক হয়রানি বা হুমকি প্রদর্শন করলে তাকে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷ কোনো শিক্ষার্থী অশিক্ষার্থীসুলভ আচরণ করলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীপ্রতিনিধির অংশগ্রহণে যথাযথ তদন্তপূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
এবিষয়ে বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুন নাহার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহের সাথে আমরা একমত। দাবিগুলো বাস্তবায়নে অতি দ্রুত আমরা একটা উপ-কমিটি গঠন করবো যেন বাস্তব ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।’
তামিম/এমএ//