নওগাঁর পোরশায় ছয় কৃষকের ২৪ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির স্থানীয় এক নেতা তৌফিক শাহ এর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ওই ছয় কৃষক পৃথকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত তৌফিক শাহ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি।
ভুক্তভোগী সব কৃষকদের দাবি, তাঁরা কেউ কোন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী-লীগ সরকার পতনের পর থেকে দেশের অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তৌফিক শাহ ও তাঁর অনুসারীরা দলবদ্ধ হয়ে ওই ছয় কৃষকের জমি দখল করে নিয়েছে।
বর্গাচাষী ছয় কৃষক ও থানা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মিনাবাজার এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হামজা চৌধুরীর কাছ থেকে উপজেলার তেতুলিয়া মঠবাড়ী গ্রামের কৃষক দুর্জয় মন্ডল, গোপালপুর গ্রামের মোকলেসুর রহমান, মাহতাব কাজী, সলেমান ও খায়রুল ইসলাম এবং পোরশা কাঠপুকুর গ্রামের শ্রী রবি ২৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। চলতি আমন মৌসুমে তারা ওই সব জমিতে ধান আবাদ করেছেন কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি নেতা তৌফিক শাহ্ ও তার অনুসারীরা দলবদ্ধ হয়ে ওই ছয় কৃষকের জমি দখল করে নিয়েছে। এরপর থেকে তাঁরা জমিতে যেতে পারছেন না। এমনকি জমির কাছে গেলে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
তেতুলিয়া মঠবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা দুর্জয় মন্ডল বিডিএন৭১ কে জানান, সে সাব্বির হামজার কাছ থেকে তেতুলিয়া মৌজার বাঁশকুড়ি মাঠে ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে পাঁচ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে ওই ১০ বিঘা জমিতেই ধান আবাদ করেছি। গত ১৩ আগস্ট সকাল থেকে আমার কয়েকজন শ্রমিক ধানের খেতে ঘাস নিড়ানি দিচ্ছিলো। সকালে তৌফিক শাহ্ ৩৫ থেকে ৪০ লোক নিয়ে জমিতে এসে শ্রমিকদের সেখান থেকে ভয় দেখিয়ে তুলে দেন। খবর পেয়ে আমি সেখানে গেলে তারা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করে। দৌড়ে পালিয়ে আমি আমার জীবন রক্ষা করি। এখন তৌফিক শাহ ও তাঁর লোকজন বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে এবং জমিতে দ্বিতীয়বার গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ১০ বিঘা জমিতে আবাদ করতে আমার প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আবাদ করা ধান কেটে ঘরে তুলতে না পারলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমাকে পথে বসতে হবে। থানাতে অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত থানা পুলিশও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা মোকলেসুর রহমান নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, সে উপজেলার তেতুলিয়া মৌজার শিবিকান্দর এলাকায় ২ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চার বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। গত ১০ আগস্ট তৌফিক শাহ্ এর লোকজন নিয়ে গিয়ে তাঁকে হুমকি দিয়ে এসেছেন। সে যেনো ওই জমিতে আর না যান এবং সে জমির আশপাশে গেলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে তাঁকে হুমকি দিয়েছে।
সাব্বির হামজা চৌধুরী জানান, ইব্রাহিম শাহ্ আমার দাদা ১১০০ বিঘা জমি ওয়াকফ আলাল আওলাদ করে দিয়েছেন। ওয়াকফ প্রশাসকের আদেশে ২০১৬ সাল থেকে ওই সব ওয়াকফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে আমি নিয়োগ পেয়েছি। নিয়ম মোতাবেক মোতাওয়াল্লীর মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তি ভোগদখল করতে হবে কিন্তু এতো দিন কোনো নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে তৌফিক শাহ্ ও স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী লোক ওই সব ওয়াকফ সম্পত্তি দখল জোর করে দখল করে আসছিলেন। অফিশিয়াল মোতাওয়াল্লী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে জমির দখল বুঝে নিতে গেলে তৌফিক শাহ নির্দেশে আমাদের ওপর একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে হামলায় একজন কৃষকের মৃত্যুও হয়। এসব ঘটনায় একাধিক মামলা বর্তমানে চলমান রয়েছে। বৈধ মোতাওয়াল্লী হওয়ার পরও আমি এখনও ওয়াকফ করা সব সম্পত্তি বুঝে পাইনি। আংশিক যেটুকু জমি আমার দখলে ছিল, ৫ আগস্টের পর সেই জমিগুলোও জোর করে দখল করে নিচ্ছেন।
বর্গাচাষির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তৌফিক শাহ্ বলেন, ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সেসময় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ছত্রছায়ায় কিছু আওয়ামী লীগের লোকজন আমার বেশ কিছু জমি দখল করে নেয়। এতোদিন তাঁরা অন্যায়ভাবে আমার জমি দখল করে চাষাবাদ করে আসছিল। আমি কোনো জমি দখল করতে যাইনি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই দখলকারীরা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছে। দলীয়ভাবে আমাকে হেয় করার জন্য আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মোজ্জাম্মেল শাহ্ চৌধুরীর ইন্ধনে ওই ছয় কৃষক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি।
পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল শাহ্ চৌধুরী জানান, যে কোনো ধরণের অন্যায় অপকর্মের সাথে দলীয় কোনো নেতাকর্মী জড়িত থাকলে অথবা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে আমার সুপারিশ থাকবে। যাঁরা দখলবাজি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড।
রনক/এমএ//