রাবি প্রতিনিধি:
এক কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত ডাক্তার রাজু আহমেদের করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় তারা। ভুক্তভোগী কিশোরীর মা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের শিক্ষক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ভুক্তভোগীর মা বলেন, গত ৩০ অক্টোবর রাতে রাজশাহী নগরীর আমেনা ক্লিনিকে তার মেয়েকে যৌন হয়রানি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক রাজু আহমেদ। এ ঘটনায় ডা. রাজুর বিরুদ্ধে উপচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে। কিন্তু বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই আমাকে এবং আমাকে যারা সহযোগিতা করছে তাদেরকে হুমকি দেওয়া, মামলার ভয় দেখানো এবং বিষয়টি মীমাংসা করার আহ্বান করছে রাজু আহমেদ। গত ১৩ নভেম্বর আমাকেসহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং আসল ঘটনাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা।
লিখিত বক্তব্য তিনি আরও জানান, রাজুর সাথে বেশকিছু সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-কর্মকর্তার রাজুকে সাহায্য করছে। আমার মেয়ে এখন মানসিকভাবে চরম বিপযর্স্ত হয়ে পড়েছে। আমি অনতিবিলম্বে রাজুকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
কোন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই কি তার বিচার হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মহানগর যুবলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রাজু ক্ষমতার দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশের রাজুকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ থাকলেও তা করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণের পরও প্রতিবেদন জমা ও শাস্তির সুপারিশ করেননি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক এডভোকেট দিলসেতারা চুনি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুন্নবী সামাদী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বোরাক আলী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া, রাবি শাখা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক মোবাররা সিদ্দিকা, বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আফরোজা আখতার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর রাতে রাজশাহী নগরের তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে এক কিশোরীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরদিন ভুক্তভোগী শিশুটির মা বাদী হয়ে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলন করার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ নভেম্বর রাজু আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এবং যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধবিষয়ক অভিযোগ কমিটিকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে ঘটনা ঘটার ১৪ দিন পর ১৩ নভেম্বর ভুক্তভোগী শিক্ষিকাসহ আরও দুইজনের নামে রাজশাহী কোর্টে পাল্টা মামলা দায়ের করে রাজু আহমেদ।
মীর কাদির
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়