পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে। শনিবার রাতে এলাকার বিনোদপুর বাজারে তাঁর ওপর হামলা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ তার মৃত্যুর বিষয়টি নগরের নিশ্চিত করেছেন। আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছেন তিনি। সেই অভিযোগে শনিবার রাতে বিনোদপুর বাজারে মাসুদের ওপর হামলা হয়। পরে একদল শিক্ষার্থী তাঁকে প্রথমে মতিহার থানায় নিয়ে যান। কিন্তু মতিহার থানায় ৫ আগস্টের সহিংসতার কোনো মামলা নেই। তাই তাঁকে বোয়ালিয়া থানায় আনা হয়, যেন তাঁকে কোনো সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ওসি বলেন, গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মাসুদ। সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। এখন পরিবার চাইলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস মাসুদের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন কী কারণে মাসুদ মারা গেছেন, সেটি ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে।
আবদুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি নগরের বুধপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আবদুল্লাহ আল মাসুদ। এ সময় মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাঁ পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল তাঁর হাতের রগ। ওই হামলায় পা হারিয়ে মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন। তাঁর অন্য পা শনিবার রাতে ভেঙে দেওয়া হয়। মাসুদকে আহত অবস্থায় বোয়ালিয়া থানায় আনার পরে তাঁর কথাবার্তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বোয়ালিয়া থানা-হাজতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদকে বলতে দেখা যায়, ‘আমি বিনোদপুরে ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। কিন্তু আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগটগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জানায়,আব্দুল্লাহ আল মাসুদ দীর্ঘদিন ধরে বেকার ছিলেন। নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে তিনি একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেছিলেন। সেসময়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেআবদুল্লাহ আল মাসুদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর । ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দেন তিনি। সেই থেকে এখন পর্যন্তিত তিনি এ পদেই চাকরি করতেন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর মেয়ের বাবা হন মাসুদ। শনিবার নবজাতক শিশুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। ক্যাপশনে মাসুদ লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। গত ৩–৯–২০২৪ তারিখে কন্যাসন্তানের পিতা হয়েছি।