২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের এক স্মরণীয় ঘটনা। এটি ছিল সামরিক শাসন ও একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও সংগ্রামের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি, এবং বেকারত্ব চরম আকার ধারণ করেছিল। অব্যাহত দুর্নীতি, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি করেছিল।
২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের রায়কে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়। ১ জুলাই ঢাকায় প্রথম প্রতিবাদ মিছিল হয়। ২-৬ জুলাই সারাদেশে শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের স্লোগানে মুখরিত হয় রাজপথ। তাদের স্লোগান ছিল: ‘কোটা না মেধা, মেধা, মেধা’ এবং ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’।
এই আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো নারী ও যুবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। প্রযুক্তির সহায়তায় আন্দোলনের বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া, তরুণ নেতৃত্বরা ছিলেন এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রবিন্দুতে।
১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হলে আন্দোলন জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনে শহীদ হন শিক্ষার্থী, শ্রমিক, কৃষকসহ সাধারণ মানুষ।এক শহীদের মায়ের কথা,”তুই মোর ছাওয়াক চাকরি দিবুনা, না দিলু, কিন্তু মারলু কেনে?”
৩৬ দিনের তীব্র সংগ্রামের পর স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান তরুণ প্রজন্মের শক্তি, ঐক্য, এবং গণতান্ত্রিক চেতনাকে উজ্জীবিত করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে জনগণের ঐক্য ও সাহসিকতা অন্যায় ব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে পারে। এই আন্দোলন দেশের ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
• বৃষ্টি খাতুন, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী।
আরইউএস