মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রাজাপুর সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করার কারণে মহাল ইজারা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, সংযোগ সড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং রাজাপুর ও ধলিয়া বেড়িবাঁধের কাজের অগ্রগতির দাবিতে মানববন্ধন করেছে দক্ষিণাঞ্চলের তিন ইউনিয়নের জনগণ। মানববন্ধনে তিন ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে রাজাপুর সেতুর উপর হাজীপুর, শরীফপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নবাসী আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে স্থানীয় সমাজসেবক মো. আমির আলীর সভাপতিত্বে ও সংগঠক ফয়জুল হকের পরিচালনায় একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সাবেক এমপি এড. নওয়াব আলী আব্বাছ খান, উপজেলা সিপিবি’র সভাপতি ও পৃথিমপাশা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল লতিফ, পৃথিমপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আকদ্দস আলী মাস্টার, ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাও. আছলাম হোসেন রহমানী, উপজেলা সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোশাররফ আলী, পৃথিমপাশা ইউপি’র সাবেক সদস্য মো. আব্বাছ আলী, হাজীপুর ইউপি সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান রুমেল ও মনিরুজ্জামান হেলাল, প্রভাষক গিলমান আলী, সংগঠক সৈয়দ আতাউর রহমান, ছাত্র সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম, সংবাদকর্মী হাসান আল মাহমুদ রাজু ও মাহদী হাসান প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতদ অঞ্চলের তিন ইউনিয়ন হাজীপুর, শরীফপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হলো রাজাপুর সেতু। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে রাজাপুর সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে ২ শত ৩২ দশমিক ৯৪ মিটার পিসি গার্ডার সেতু, সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও জমি অধিগ্রহণ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালে রাজাপুর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়াতে সেতু দিয়ে যান চলাচল এখনো শুরু হয়নি। স্থানীয় লোকজন সেতুর দুই পাশে বালু দিয়ে ভরাট করা এপ্রোচ সড়ক ব্যবহার করে ভোগান্তি নিয়ে কোনমতে চলাচল করছেন। এদিকে রাজাপুর সেতু এলাকা থেকে নদী শাসন আইন না মেনে বর্তমান ইজারাদার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। যার কারণে সেতু চালু হওয়ার আগেই সেতুটি চরম হুমকির মুখে রয়েছে। বালু তোলার কারণে সেতুর পিলারের নিচ থেকে বালু ও মাটি সরে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক বরাবরে রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দেন পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী লোকজন।
বক্তারা আরো বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে দ্রুত সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন করে সেতুতে যানবাহন চালু করা এবং সেতুর নিকটবর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ও ইজারা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃক্ষের কাছে জোর দাবি জানান। অন্যথায় আগামীতে আরো বৃহৎ কর্মসূচির হুঁশিয়ারী দেন বক্তারা।
এ বিষয়ে বালু মহালের বর্তমান ইজারাদার খালেদ আহমদ বলেন, সরকারি নিয়ম মেনেই আমরা বালু উত্তোলন করছি। বালু উত্তোলনের কারণে সেতু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, রাজাপুর সেতুর উভয়পার্শ্বের এক কিলোমিটারের মধ্য বালু উত্তোলন না করতে ইজারাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং লাল পতাকা দিয়ে সীমানা নির্ধারণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়ছার হামিদ বলেন, সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। তারপরও যদি সেতুর নিচ থেকে বালু তোলা হয় তাহলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংযোগ সড়কের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন বলেন, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকায় সংযোগ সড়কের কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ শুরু এবং শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেতুর পাশ থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে তিনি বলেন, বালু মহাল ইজারা বন্ধে এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, রাজাপুর ও ধলিয়া এলাকার কাজে জমি অধিগ্রহণে জটিলতায় কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। তাছাড়া অর্থ সংকটের কারণে অনেক ঠিকাদার কাজ শুরু করতে দেরি করছেন। তারপরও আমরা কাজ শুরু করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।