দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে।
সর্বশেষ সোমবার রাতে রাজধানীর পল্লবী থানায় ওসি নজরুল ইসলামসহ তিন পুলিশ সদস্য এক যুবকের অতর্কিত হামলার শিকার হন। এর আগে সাভার, মোহাম্মদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর ও মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও আসামি ছিনতাই করতেও সংঘবদ্ধ হামলা চালানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ১০টি ঘটনা ঘটেছে। কিছু ক্ষেত্রে থানায় ঢুকে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সাত মাসে পুলিশের ওপর ২৬৭টি হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, পুলিশের ওপর হামলা আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। এটি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। অপরাধীরা হয়তো স্বল্পমেয়াদে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করতে পারছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পুরো দেশের ওপর পড়বে।
সম্প্রতি রংপুরের এক কর্মশালায় আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছে। নাগরিক সমাজের উচিত পুলিশকে সহযোগিতা করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি পুলিশকে সগৌরবে ফিরিয়ে আনতে এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুলিশের ওপর ধারাবাহিক হামলা বাহিনীটিকে সংকটে ফেলছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নিরাপদ না থাকলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাও দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে সাধারণ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে এবং অস্থিতিশীলতা বাড়বে।
অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মতে, “সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা চায় পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকুক, যাতে তারা অপরাধ চালিয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে ছিনতাইকারী, ফেরারি আসামি ও মাদক কারবারিরা যখন পুলিশের ওপর হামলা চালায়, তখন এটি উদ্বেগজনক। এসব অপরাধ কঠোরভাবে দমন করা উচিত এবং পুলিশকে সহায়তায় নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় দেশে অরাজকতা আরও বাড়বে।”