প্রতি বছর ঈদযাত্রায় বাস ও ট্রেনের আগাম টিকিট সংগ্রহে কালোবাজারি চক্রের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গত রবিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে টিকিট কালোবাজারি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকবে।
গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, টিকিট বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু ব্যক্তি কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাস ও ট্রেনের টিকিট মজুত করে পরে দুই থেকে তিনগুণ দামে বিক্রি করে। এ নিয়ে সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারির বিরুদ্ধে মানববন্ধনও হয়েছে। তবে মানববন্ধন শেষে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে হামলার ঘটনায় চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এবারের ঈদেও একই অবস্থা হতে পারে বলে শঙ্কিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. রেজওয়ান। তিনি বলেন, ‘অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার এক দিনের মাথায় সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ১ হাজার টাকার টিকিট ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকায় কিনতে হয়।’
আরেক যাত্রী মো. হৃদয় বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি রংপুর। ঈদ এলেই পরিবহন মালিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। তবে বর্তমান সরকার অনেক কিছু পরিবর্তন করেছে, এবার দেখার বিষয় টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে পারে কি না।’
রবিবারের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ঈদের সময় রাজধানীর গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনালে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। এসব ক্যামেরা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া, বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম জানান, এবারের ঈদে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচটি অগ্রিম টিকিট কাটতে পারবে। এছাড়া, বিভিন্ন বাস টার্মিনালে তাদের প্রতিনিধিরা মনিটরিং করবেন, যাতে টিকিট কালোবাজারি না হয়।
তিনি বলেন, ‘বাস মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কেউ টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। সমিতির পক্ষ থেকেও নিয়মিত বৈঠক করা হবে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন, এবারও টিকিট কালোবাজারি চক্র সক্রিয় থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর সবকিছু আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল, এখন কিছু নতুন পক্ষ তৈরি হয়েছে। তাই সরকারের উচিত যাত্রী প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সরাসরি অভিযান পরিচালনা করা। যেখানে কালোবাজারি পাওয়া যাবে, সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, পুরো টিকিট ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে মনিটরিং করে সমস্যাগুলো সমাধান করা না হলে যাত্রীরা আগের মতোই ভোগান্তির শিকার হবেন।