রুশাইদ আহমেদ: ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী জেনারেল স্ট্রাইকের অংশ হিসেবে সোমবার (৭ এপ্রিল) রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সকল পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি, এ দিন গাজার জনগণের জন্য বিশেষ সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
রবিবার (৬ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলীর আদেশক্রমে রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকাল ৭ এপ্রিল ২০২৫ সোমবার সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়া, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত বর্বর আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ এবং গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে আগামীকাল ৭ এপ্রিল ২০২৫ সোমবার, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য এই সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “ফিলিস্তিনের মজলুম জনপদ গাজায় বর্বর ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর পাশাপাশি, আমরা কাল (সোমবার) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আমরা এই সমাবেশে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
বেরোবি উপাচার্য আরও বলেন:
❝গণতন্ত্র এবং আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে আমরা যেমন প্রতিক্রিয়াশীল, তেমনই বিশ্বের প্রতিটা স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতি আমরা অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করি। তাই আমরা গোটা বিশ্বের সঙ্গে একযোগে প্রতিবাদ জানাচ্ছি ফিলিস্তিনের মজলুম জনপদ গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড অখণ্ড থাকা এবং গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধ হোক—এটাই আমাদের একমাত্র দাবি। এ জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ।❞
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক খোকন ইসলাম বলেন, “স্পষ্ট দখলদারত্ব এবং জেনোসাইডের দায়ে ইসরায়েল আজ বিশ্বের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে এক অনস্বীকার্য যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কূটনৈতিক সম্পর্ক ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের হিসেবে অনেক রাষ্ট্রই লজ্জাজনক পন্থায় নিশ্চুপ রয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে যারা নীরব, তারাও অপরাধের অংশীদার।
খোকন বলেন:
❝মানবাধিকার নিয়ে বিশ্বজুড়ে যত সংগঠন, যত সম্মেলন, সবই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠানের নিস্পৃহতা প্রমাণ করে—এটি কেবল পরাশক্তিদের হাতের পুতুল। ছোট ছোট রাষ্ট্রের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাই যেন এর প্রধান কাজ। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোও আজ স্তব্ধ। তাদের বিক্রিত তেল দিয়ে চলা যুদ্ধবিমান দিয়ে যেন নিজেরাই প্যালেস্টাইনের রক্তাক্ত বুক ছিন্নভিন্ন করছে। রাফার ধ্বংসস্তূপে গড়ে উঠছে কবরের শহর।❞
খোকন ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির ওপর জোর দিয়ে উল্লেখ করেন, এই মুহূর্তে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিপর্যায়ে যতভাবে সম্ভব ইজরায়েলের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তাই গ্লোবাল স্ট্রাইকের অংশ হিসেবে আগামীকাল বেরোবিতে কর্মসূচি পালন করা হবে। আমরা সকলে আল্লাহর কাছে হাত তুলে লানত করবো ইসরায়েলের উপর— এই দোয়াই হোক আমাদের প্রতিরোধের শুরু।