রুশাইদ আহমেদ: বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি চট্টগ্রামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬০ জন বিদেশি বিনিয়োগকারী। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা এই সফরে অংশগ্রহণ নেন।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সকালে প্রতিনিধি দলটি আনোয়ারার কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) পরিদর্শনে যান। সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত শিল্প গ্রুপ ইয়ংওয়ান করপোরেশন পরিচালিত বিভিন্ন কারখানার কার্যক্রম ঘুরে ঘুরে দেখেন তাঁরা। কেইপিজেডে রয়েছে ৭০ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যাদের অধিকাংশই তৈরি পোশাক, জুতো এবং ব্যাগ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠান সবুজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃত, যা পরিবেশবান্ধব উৎপাদন কার্যক্রম নিশ্চিত করে।
সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিনিধি দল কারখানার পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কর্মীদের জন্য গড়ে তোলা আবাসন, ১০০ শয্যার হাসপাতাল এবং বিভিন্ন বিনোদন সুবিধাও ঘুরে দেখেন।
ইয়ংওয়ান করপোরেশন প্রতিনিধিরা তাদের উপস্থাপনায় বলেন:
❝আমাদের প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই ৩৫ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এর পাশাপাশি, একটি ৬০০ শয্যার নতুন হাসপাতাল এবং একটি আধুনিক টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট নির্মাণাধীন রয়েছে, যা ভবিষ্যতে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।❞
কারখানার শ্রমিকরাও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাদের কর্মপরিবেশ সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয়।
দিনের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিনিধি দল মিরসরাইয়ের ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে যান। এই অঞ্চলের অবকাঠামো, সম্ভাব্য শিল্প খাত এবং বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তারা আরও বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
ইয়ংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কি হাক সাং বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন:
❝অতীতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও বর্তমান সরকার প্রশাসনিক বিধিবিধান সরলীকরণ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রশাসনিক জটিলতাকে এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এখানে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক। তাই আমরা আমাদের কোম্পানির আরও সম্প্রসারণ ঘটানোর বিষয়েও আশাবাদী।❞
চীনের একজন বিনিয়োগকারী এই সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে জেনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। তার মতে, ব্যবসার পরিবেশ ইতিবাচক হলেও, বিনিয়োগ নীতিমালাগুলো পুনর্বিবেচনা করে আরও সহজ করা হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরও আগ্রহী হবেন।
সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের জানান:
❝এই পরিদর্শনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশের আধুনিক শিল্প অবকাঠামো ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরা। এই সফর বৃহত্তর বিনিয়োগ সম্মেলনের কৌশলগত অংশ, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আগ্রহকে কার্যকর প্রতিশ্রুতিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা চলছে।❞
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) জানিয়েছে, এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনেরও বেশি বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। এই বৃহৎ আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংলাপ, নেটওয়ার্কিং এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এখানে বৈশ্বিক কর্পোরেট নেতৃবৃন্দ এবং শীর্ষ নির্বাহীরা অংশগ্রহণ করছেন, যা সম্মেলনের গুরুত্ব ও সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।