‘ব্যটা ছাওয়াল নাই, খাওয়াইবো ক্যডা’
শীতে কাঁপতে কাঁপতে বলছিলেন ৭০ঊর্ধ্ব বৃদ্ধা – ফাতেমা বেগম।
উত্তরের হাড়কাঁপানো শীতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তার পাশে ঝুড়িতে কিছু শিঙাড়া, পেঁয়াজু নিয়ে চাদর গায়ে বসে কাঁপছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা ফাতেমা।
ফাতেমা বেগমের বয়স ৭০বছর। ১১বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। তার কোনো সন্তান নেই। দেখাশোনা কিংবা খাওয়ানোর মতো নেই কোন আত্মীয়-স্বজন। ভিক্ষাবৃত্তি না করে প্রতিবেশীর কাছ থেকে সামান্য টাকা ধার করে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যম্পাসে শিঙারা আর পিয়াজু বিক্রি করেন।
ফাতেমা রংপুর নগরীর মডার্ন শেখপাড়া এলাকায় জয়নাল হোসেনের স্ত্রী। বুধবার সকাল ৯টায় বেরোবি ক্যাম্পাসে দেখা মেলে ফাতেমা বেগমের। এই তীব্র শীতে মলিন শাড়ির উপর গায়ে সামান্য চাদর আর পায়ে মোজা দিয়ে চোখ মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে তার সাথে কথা হয় একাডেমিক ভবন-৩ এর সামনে।
ফাতেমা জানান, বাড়ি থেকে বের হয়ে নগরীর লালবাগ মোড় থেকে ১০০টাকার শিঙারা পেঁয়াজু কিনে হাঁটতে-হাঁটতে আসেন বেরোবি ক্যাম্পাসে। এই শিঙারা পিয়াজু বেঁচে যা সামান্য লাভ হয় তাই দিয়ে কোনভাবে তার জীবন চলছে।
ফাতেমা বলেন, ‘বাবা আমার কোন সন্তান নাই, স্বামী মারা গেল ১১ বছর। শরীরে শক্তি নেই তাই মানুষ কাজ দেয় না। মানুষের কাছে হাত পাততে লজ্জা করে। তাই শিঙারা পিঁয়াজু বেচি। গত ১মাস ক্যম্পাস বন্ধ থাকায় এই আয়ের পথটুকুও ছিল বন্ধ। অনেক কষ্টে দিন কাটাইছি। আজ ১মাস পর আইছি। তরিতরকারি আর চালের যে দাম, কী করে খাব; কেমনে বাঁচবো।
বেরোবির কয়েক শিক্ষার্থী জানান, ফাতেমা বেগম এক বছরের অধিক সময় ধরে ক্যম্পাসে শিঙারা পিয়াজু বিক্রি করতে আসেন। ক্লাস-পরিক্ষার চাঁপে সকালে যারা না খেয়ে আসেন- তাদের ভরসা ফাতেমা বেগম। তারা তাকে চেনেন। কেউ ভালোবেসে দাদী আবার কেউ পিঁয়াজু খালা বলে ডাকেন।
সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিরুল বলেন, এই বৃদ্ধা নারীকে দেখে আমাদের খুব কষ্ট লাগে। তাকে এই বয়সে বাড়িতে থাকার কথা ছিল কিন্তু পেটের দায়ে তিনি এই সকালে ক্যম্পাসে শিঙারা, পেঁয়াজু বিক্রি করতে এসেছেন।
আকবর আলী রাতুল
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।