স্বপ্ন টানে দিলাম পাড়ি, অচিন পথে আপন ছাড়ি….
এইতো সময় ফিরে আসার, স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার~
ঈদের আগে গ্রামীণফোনের প্রচারিত এ টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের গানের লাইন গুলো সবারই খুব পরিচিত। ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফেরা ও তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখানো হয়েছে এই বিজ্ঞাপনটিতে।
স্বপ্ন গড়ার লক্ষ্যে , জীবিকার তাগিদে অনেকেরই ঘর ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে পাড়ি দিতে হয় বহুদূর অচিন পথে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা শত শত স্বপ্ন নিয়ে পরিবার-পরিজন ছেড়ে পড়াশোনা করতে যায় একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে থাকে কখন ছুটি মিলবে আর কখনই বা ছুটে যাবে আপনজনের কাছে। একাডেমিক পড়ালেখার চাপে খুব একটা বন্ধ পায় না শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পার্বনে ক্ষেত্রবিশেষে পাওয়া যায় ছুটি। আর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবই হলো এই ঈদ। ঈদের এই বিশেষ ছুটির অপেক্ষায় যেন দিন পার হতে চায় না! মন উতলা হয়ে থাকে কবে ছুটি হবে ক্যাম্পাস।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের ক্যালেন্ডারে নির্ধারিত ছুটির তালিকা অনুযায়ী পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে শুক্রবার (৫এপ্রিল ) থেকে বুধবার (১৭এপ্রিল ) বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ অর্থাৎ ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে। রমজান মাসেও একাডেমিক ক্লাস, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন, টিউশন ইত্যাদির চাপে রোজায় ক্যাম্পাসেই গড়ে তুলতে হয় আরেকটি পরিবার। তবুও আপনজনের অভাব তো থেকেই যায়। তাই সকল কার্যক্রম শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করে তারা যাতে ঈদ আনন্দ পরিবারের সাথে উপভোগ করতে পারে। বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি থেকেই কাজ করে অন্যরকম এক ভালোলাগার। মন উতলা হয়ে থাকে কখন সকাল হবে, কখন রওনা হবো!
তবে এসময় শত ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয় নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে টিকিট কাঁটা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের যানজট যেন ক্লান্ত করে তোলে প্রতিটি প্রাণ। তবু অবিরাম ছুটে চলা সেই চেনা পথে, আপনজনের পরশে ক্লান্ত প্রাণকে বিশ্রাম দিতে।
এমনই অনুভব প্রকাশ পায় ফোকলোর বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং সিলেট ডিভিশনাল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তানজিভ সারোয়ারের কথায়। তিনি জানান, ক্যাম্পাস থেকে বাসার দুরুত্ব এপ্রক্সিম্যাট ৩৫০ কিলোমিটার! দুরুত্বের থেকেও ক্যাম্পাস তথা ত্রিশাল টু সিলেটের যাত্রাপথের এক্সপ্রিয়েন্স খুব একটা ভালো না। কখনো ১২ ঘন্টার কম সময়ে বাসায় পৌছোতে পারিনি৷
তিনি আরো বলেন, “বছরে দুই ইদে দুবার আর সেমিস্টার ব্রেকে একবার বা দুবার বাসা আসা হয়। ক্যাম্পাস থেকে বাসা আসার চিন্তাই ক্যাম্পাস লাইফের টক্সিসিটির ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। পার কিলোমিটারে সিলেটের দুরুত্ব যতো কমে আমার শান্তিও সেই গতিতে বাড়তে থাকে পাশাপাশি পড়াশোনা বা প্রোডাকটিভিটিও কমে যেতে থাকে যদিও এই অবকাশ পুরোটাই মুভি, সিরিজের আর কাজিনদের। ইদে সব কাজিনস এক হই তাই ভালাে লাগার ভ্যারিয়েবলের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ক্যাম্পাস ছেড়ে বাসায় আসলে আনন্দ হবে এই ভাবনাই ভালোলাগা বাড়িয়ে দেয়। হ্যাপি হোমকামিং।”
ঈদে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি ফেরার অনুভূতি ব্যক্ত করে অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক সমিতির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক এস এম মোজতাহীদ প্লাবন বলেন, “ছোটথেকে স্বপ্ন যাবে বাড়ি গান শুনতাম। কিন্তু এটা যে এতোটা বাস্তবিক গান এটা এখন বুঝতে পারি। আমার বাসা তো উত্তরবঙ্গে। এজন্য ট্রেনে যেতে হয়। ১৫ দিন আগে টিকিট কাটতে হয়। আমার বাড়ি যাওয়ার আনন্দ ১৫ দিন আগেই শুরু হয়। এবারও ব্যতিক্রম হয় নাই। ওদিকে বাসায় পরিবারের সবাই অপেক্ষা করে আছে। সবকিছু মিলিয়ে চমৎকার এক অনুভূতি।”
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানেই স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা। আর সেটা যদি হয় পরিবারের সাথে তাহলে এই আনন্দ আর খুশির মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণ। সকল দুঃখ-কষ্ট ভুলে ঈদের দিনে যে যার সাধ্য মতো খুশিতে মেতে উঠে। তাই তো ছুটে চলা ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করতে।
রিভা সুলতানা,
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।