দেশের অন্যতম শক্তিধর জনগোষ্ঠী হলো শিক্ষার্থীরা। নিজেদের দাবি আদায়ে তাদের আন্দোলন নতুন কিছু নয়। এবারে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবারও রাজপথে ছাত্রজনতা। আমাদের দেশের সংবিধানে কোটা ব্যবস্থার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অন্যতম। এতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং নাতি—নাতনীরা সুবিধা ভোগ করতে পারে। লেখাপড়া এবং সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোটাধারীদের প্রাধান্যের ফলে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাই এর সংস্কারের দাবিতে ঢাকা সহ দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছে রাজপথে।
তারা চায় সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল হোক। ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ আরোও কয়েকটি দাবি নিয়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এই আন্দোলন করছেন। আমাদের দেশের ইতিহাসে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি চালুর বিষয়টি বেশ দীর্ঘ। মূলত দেশের স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থা চলে আসছিল। এরই একপর্যায়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন করে। যার পেক্ষিতে ২০১৮ সালের অক্টোবরে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে প্রথমে কোটা ছিল ৮০%, যা পরে কমিয়ে ৫৬% করা হয় এবং ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করা হয়।
সরকার হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী স্বাধীনতার পর থেকেই অর্থাৎ ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হত এবং বাকি ৮০ শতাংশ পদে নিয়োগ হত কোটার ওপর ভিত্তি করে। ১৯৭৬ সালে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ বাড়িয়ে সেটি ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এরপর ১৯৮৫ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারিপদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করা হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায় নিয়োগের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। এসব কোটাধারীদের মধ্যে মধ্যে রয়েছে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা কোটা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। পরে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু করে। যাতে করে মোট কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশে। কোটা ব্যাবস্থার শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা এর অন্তর্ভূক্ত ছিল। পরে এ কোটায় তাদের সন্তান এবং পরে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি—নাতনি যুক্ত করা হয়।
নিয়োগের এই পদ্ধতির ফলে দেখা গেল কোটার বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকত। যার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্যপদ মেধাতালিকা থেকে নিয়ে পূরণ করা হবে।
২০১৮ সালে পূর্বের কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ছাত্রদের আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকার ওই বছর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে। তবে কোটা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে বহাল থাকে। এই দুই শ্রেণিতে পোষ্য, আনসার—ভিডিপিসহ কিছু কোটা রয়েছে। এর ভিত্তিতে এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাইকোর্ট নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। তবে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মন্তব্য মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, তারপর তাদের সন্তান সন্ততিরা পর্যায়ক্রমে সুবিধা ভোগ করতে থাকে একাধিকবার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে সরকারি চাকরি পাওয়া পর্যন্ত তারা কোটা সুবিধা ভোগ করায় পিছিয়ে পড়ছে মেধাবী শিক্ষার্থীরা। সংস্কারের ক্ষেত্রে তাদের মতামত হলো কোটাধারীরা যেনো যেকোনো একটি ক্ষেত্রে কোটা ব্যবহার করে। হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অথবা সরকারী চাকরিতে এর সাথে আরোও কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন অব্যহত রেখেছে তারা।
তাদের এসব দাবি না মেনে নেয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন অব্যহত রাখবে বলে জানিয়েছে। ঢাকার শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তারা অবস্থান নিয়েছে। শুধু ঢাকায় নয় দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের এই দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি না মেনে নেয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরবে না বলে জানিয়েছে। এই আন্দোলনের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারন জনগনের। রাজধানীর প্রধান সড়ক গুলোর সংযোগস্থল বন্ধ থাকায় যান চলাচলও প্রায় বন্ধ। চলমান পরিস্থিতিতে এসব ভোগান্তি কাটিয়ে উঠতে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরী।
ক্যাম্পাস ছেড়ে রাজপথে শিক্ষার্থীরা
পড়তে থাকুন
Add A Comment
আমাদের সেবা সমূহ
সম্পাদকঃ ইমরান খান নাহিদ
প্রকাশকঃ এরশাদুর রহমান রিফাত
৭৫৫, গ্রীন রওশন আরা টাওয়ার (সপ্তম তলা),সাত মসজিদ সড়ক, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫
ইমেইল: info@bdn71.com
ফোন: +88০১৭৭৪৪২৪৫৩৭
© All rights reserved BDN 71 ২০২৫