দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীন অবস্থায় খুলনা অঞ্চলের বেশিরভাগ বাস টার্মিনাল জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের ভেতরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সড়কের ওপর যাত্রী ওঠানামা করছে পরিবহনগুলো, যা শহরের প্রধান সড়কগুলোতে নিত্য যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোনাডাঙ্গা টার্মিনালের বেহাল দশা
১৯৮৫ সালে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১২ একর জায়গার ওপর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করলেও দীর্ঘ ৪০ বছরে কোনো বড় সংস্কার হয়নি। বর্তমানে টার্মিনালের ভেতরের সড়ক খানাখন্দে ভরা। পরিবহন চালকরা জানিয়েছেন, ভেতরের বেহাল অবস্থার কারণে বাসগুলো মূল সড়কে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে খুলনা থেকে কুষ্টিয়া রুটের পরিবহন শ্রমিক আল আমিন হাওলাদার বলেন, “টার্মিনালের ভেতরের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। বাধ্য হয়ে আমরা সড়কের ওপর গাড়ি রাখছি।”
যাত্রীদের দুর্ভোগ
টার্মিনালের ভেতরে টিকেট কাউন্টার না থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। শামছুল আলম নামে এক যাত্রী বলেন, “টার্মিনালে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন গাড়ির কর্মীরা আমাদের লাগেজ ধরে টানাটানি শুরু করে। যদি ভেতরে শৃঙ্খলভাবে কাউন্টার থাকত, তাহলে এসব ভোগান্তি হতো না।”
সারা অঞ্চলে একই চিত্র
খুলনা অঞ্চলের অন্যান্য বাস টার্মিনালের অবস্থাও সোনাডাঙ্গার মতোই নাজুক।
ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল: ৩০ বছর আগে নির্মিত হলেও কোনো সংস্কার হয়নি। মূল ভবন ব্যবহার অযোগ্য।
সাতক্ষীরা ও মেহেরপুর টার্মিনাল: সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত।
বাগেরহাট বাস টার্মিনাল: ২০০৪ সালে নির্মাণের পর থেকে বড় কোনো সংস্কার হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা আন্তঃজেলা টার্মিনাল: প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। মূল ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী।
পরিবহন ব্যবসায়ীরা এসব অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানালেও আশানুরূপ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোরতুজা আল মামুন বলেন, “সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান। এগুলো শেষ হলে আর সমস্যা থাকবে না।”
সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক বাস চলাচল করলেও টার্মিনালের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মনে সংশয় রয়ে গেছে, এই উন্নয়ন প্রকল্প আসলেই তাদের দুর্ভোগ কমাতে পারবে কি না।