গাজওয়াতুল হিন্দ কি?
মোহাম্মদ নিলয়
মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামিক ইতিহাসে গাজওয়াতুল হিন্দ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এমন এক যুদ্ধকে বুঝায় যা ইসলামের শেষ সময়ে সংঘটিত হবে বলে হাদিসে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশেই হবে গাজওয়াতুল হিন্দের মূল ক্ষেত্র। মুসলিম আলেম ও ইসলামিক ইতিহাসবিদরা এই যুদ্ধ প্রসঙ্গে নানাবিধ আলোচনা করেছেন যেখানে অধিকাংশের মতামত এই যুদ্ধে হিন্দুস্থান বিজয় করে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠা করবে মুসলিমরা।
গাজওয়াতুল হিন্দের মূল উদ্দেশ্য ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করা এবং হিন্দুস্তানের ভূখণ্ডে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে এই যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
এই যুদ্ধ কোথায় হবে?
গাজওয়াতুল হিন্দ থেকে ‘আল-হিন্দ” শব্দটি এসেছে যা দ্বারা ভৌগোলিকভাবে দুইটি স্থানকে নির্দেশ করে। শেখ মাশহুর হাসান স্বীয় আল ইরাক ফি আহাদিসা ওয়া আসারিল ফিতান ওয়াল মালাহিম গ্রন্থে উল্লেখ করা হয় “হিন্দ বলে কখনো কখনো ইরাকের বসরা নগরীকে বুঝানো হয়েছে। আর দ্বিতীয়ত ভারত উপমহাদেশ যা ভারত, পাকিস্থান , বাংলাদেশ, নেপাল ভুটান ও শ্রীলঙ্কা নিয়ে গঠিত। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী দ্বিতীয় তথা ভারত উপমহাদেশকে বুঝানো হয়েছে। তাই গাজওয়াতুল হিন্দ ভারত উপমহাদেশ অর্থাৎ আমাদের এই ভূখণ্ডেই সংঘটিত হবে। এমনকি হাদিসের ভাষ্যমতে প্রতিপক্ষ দলটি হবে হিন্দরা।
গাজওয়াতুল হিন্দ কবে হবে?
গাজওয়াতুল হিন্দ কবে হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা না থাকলেও এই যুদ্ধের বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে আলেম সমাজে। কতিপয় আলেম উলামায়ের মতে বনি উমাইয়ার শাসনামলে মুহাম্মদ বিন কাসিম রহ : এর ভারত বিজয়ের মতে এই যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কোন কোন উলামায়ের মতে সুলতান মাহমুদ গজননি রহঃ এর ভারত অভিযানের দ্বারাই এই যুদ্ধ শেষ হয়েছে। তবে গাজওয়াতুল হিন্দের সবগুলো হাদিস বিশ্লেষণ করলে প্রতিভাত হয় যে, এই যুদ্ধ এখনো হয়নি। ইসা (আঃ) এর আগমনের কিছু কাল পূর্বে ইমাম মাহদির নেতৃত্বে এই যুদ্ধ সংঘটিত হবে।
বর্তমানে আফগানিস্তানে কালিমাখচিত কালো পতাকাধারীদের উত্তান দেখা যাচ্ছে এবং আফগান মুসলিমরা কালিমা খচিত পতাকা নিয়ে কাশ্মীর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নিজেদের রক্ষার জন্য সেখানে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে ভারত সরকার। অন্যদিকে পাক-ভারত-বাংলাদেশের ইসলামিস্ট দলগুলোর অবস্থান ধীরে ধীরে সুদৃঢ় হচ্ছে। এর বাইরেও পানি নিয়ে ভারতের সাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কন্দল এবং কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, বাবরি মসজিদ ধ্বংস, মুসলিম নির্যাতন নিয়ে ভারতের মুসলিমদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ, সেভেন সিস্টারস বা ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্যের স্বাধীনতার দাবি নিঃসন্দেহে ভারত বিভক্তি আশু সে গাজওয়াতুল হিন্দেরই ইঙ্গিত বহন করে।