ছেউরিয়াতে লালন আখড়ায় ফকির-সাধকদের সমাবেশ: আদি ভাবধারা ফিরিয়ে আনার ১২ দফা দাবি

কুষ্টিয়ার ছেউরিয়ায় বাউল-ফকির শিরোমণি ফকির লালন সাঁইয়ের আখড়ায় আজ তৃতীয় দিনের মতো চলছে ফকিরদের বিশাল সমাবেশ। সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হলো লালন আখড়াকে তার আদি ভাবধারায় ফিরিয়ে আনা এবং আধ্যাত্মিক সাধনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

ফকিররা তাদের দাবির ভিত্তিতে ১২ দফা সুপারিশ পেশ করেছেন, যা লালন সাঁইয়ের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা।

প্রধান দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে:

১. ”লালন মাজার” নাম বাতিল করে পূর্বের ”লালন আখড়া” নাম প্রতিষ্ঠা করা।
২. লালন ফকিরের নামের উপাধী ”শাহ” বাতিল করে ”সাঁই” করা।
৩. লালন একাডেমির কর্তৃত্ব বাতিল করে ”লালন আখড়া” পরিচালনার দায়িত্ব পূর্বের ন্যায় ফকিরদের দ্বারা গঠিত ” লালন আখড়া কমিটি” এর উপর ন্যাস্ত করা।
৪. ”লালন মেলা” বাতিল করে পূর্বের ন্যায় ১লা কার্তিকে ”লালন স্মরনোৎসব সাধুসঙ্গ” ও দোল পূর্নিমায় ”দোল পূর্ণিমা সাধুসঙ্গ” আযোজন করা।
৫. মেলা কেন্দ্রিক সকল তৎপরতা বন্ধ করে সাধুসঙ্গের ভাবধারা ফিরিয়ে আনা। বেচা-কেনার হাট, মঞ্চের বক্তব্য ও গান বন্ধ হলে অগত সাধু-গুরুরা অষ্টপ্রহরব্যাপি সাধুসঙ্গের প্রত্যেক প্রহরের আনুষ্ঠানিকতা ও সঙ্গীত রীতি অনুযায়ী পালন করতে পারবে।
৬. সকল প্রকার কর্পোরেট স্পন্সর বাতিল করতে হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে ” লালন আখড়া কমিটি” কার্যক্রম চালাবে।
৭. লালন একাডেমি জেলা শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। ”লালন আখড়া কমিটি” এর উপর লালন একাডেমি কোন কর্তৃত্ব করতে পারবে না।
৮. সারা বছর লালন আখড়ায় সাধুভাব চর্চার জন্য সাধু-ফকির-ভক্তের জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ধ্যান-যোগ, তত্ত¦ালোচনা ও সঙ্গীতের জন্য পরিবেশ তৈরি করা। দেশ-বিদেশ থেকে আগত অনুরাগী মানুষরা যাতে প্রকৃত লালন ভাবধারার সাথে পরিচিত হতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
৯. সারা বছর হান্ডিখানা চালু রাখা যাতে আখড়ায় উপস্থিত ভক্ত-আশেকানরা তিনবেলা অন্য সেবা পেতে পারে।
১০. সাধুসঙ্গের সময় অগত সাধু-গুরু-ভক্তদের আসন ব্যবস্থা এমন হতে হবে যাবে ঝড়-বৃষ্টি-রোদে তাঁদের কষ্ট করতে না হয়।
১১. লালন ফকিরের সমাধীর উপর থেকে আরবী হরফের গিলাফ তুলে ফেলা। লালন আখড়া কে সম্পূর্ণরুপে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করা।
১২. সর্বপরি লালন আখড়া কে দলীয়করণ, বানিজ্যিকীকরণ ও চটুলিকরনের খপ্পর থেকে মুক্ত করে সাধুভাব ফিরিয়ে আনার জন্য যা যা করণীয় তা বাস্তবায়ন করা।

ফকিরদের মতে, লালন আখড়াকে দলীয়করণ, বাণিজ্যিকীকরণ এবং আধুনিক প্রভাব থেকে মুক্ত করে আদি সাধুভাব ফিরিয়ে আনাই তাদের এই সমাবেশের মূল লক্ষ্য। লালন সাঁইয়ের আধ্যাত্মিক ও মানবিক শিক্ষার প্রকৃত রূপ পুনরুদ্ধারের জন্য এই দাবিগুলি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন ফকিরগণ।

ফকিরদের এই দাবিগুলি ইতিমধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং সাধু-ভক্তদের মধ্যে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।