পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপানে বিরল প্রজাতির মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়া ছড়ানোর খবর পাওয়া গিয়েছে। এ ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত ব্যক্তির ২ দিনের মধ্যেই মৃত্যু ঘটতে পারে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (১৫ জুন) মার্কিন তথ্য পরিষেবাদানকারী ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য বলা হয়।
সেখানে বলা হয়, গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাস (গাস) নামের এক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মানবদেহে স্ট্রেপ্টোকক্কাল টক্সিক শক সিনড্রোম (এসটিএসএস) নামের এক রোগের সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাকটেরিয়ার মারণঘাতী প্রকরণগুলো সাধারণত ৫০ বছর বা পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদেরকে আক্রমণ করে থাকে। এতে এসটিএসএস হলে প্রথমে গলা ব্যথা এবং পরে মাংসপেশিতে ব্যথা দেখা দেয়। এরপর হাত-পা-মুখ স্ফীত হতে শুরু করে। তারপর রক্তচাপ নেমে আসে এবং এক পর্যায়ে মাংশপেশিতে পচন ধরে, শ্বাসকষ্ট হয়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে এবং সবশেষ ঘটে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু।
এ ছাড়াও, ব্যাকটেরিয়াটির ভিন্ন আরও কয়েক ধরনের প্রজাতি দ্বারা শুধু শিশুরা আক্রান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে, সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের গলায় ব্যথা দেখা দেয় এবং ফুলতে শুরু করে। শিশুদের এই অবস্থাকে বলা হয় ‘স্ট্রেপ থ্রোট’। তবে এ প্রজাতিগুলো প্রাণসংহারক নয়।
জাপানে ১৯৯৯ সালে দেশটির জাতীয় সংক্রামক রোগ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফেকশাস ডিজিজ প্রথমবারের মতো এই বিরল রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যু হওয়ার তথ্য রেকর্ড করে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, এ বছরেও ৯৭৭ জন জাপানি এ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আগামী মাসগুলোতে এ আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এর আগে ২০২৩ সালেও এসটিএসএসে জাপানের ৯৪১ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফেকশাস ডিজিজের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতি বছরই জাপানে উদ্বেগজনক হারে এসটিএসএসে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে হারে জাপানে রোগটি ছড়াচ্ছে, তাতে চলতি বছর দেশটিতে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
টোকিও উইম্যান্স মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক কেন কিকুচি রোগটির লক্ষণগুলো উল্লেখ করে বলেন, রোগটির এসব লক্ষণের প্রকাশ, রোগের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো এবং পরিশেষে রোগীর মৃত্যু— সবকিছু ঘটে দুদিনের (৪৮ ঘণ্টার) মধ্যে। বিষয়টি যেন এমন– সকালে এক ব্যক্তি সংক্রমিত হলেন, দুপুরে তার হাঁটু স্ফীত হয়ে উঠলো, রাতে উরুসহ ফুলে উঠলো এবং দুদিনের মধ্যে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন!
অধ্যাপক কেন কিকুচি আরও বলেন, এসটিএসএসে আক্রান্ত ১০০ জন ব্যক্তির মধ্যে শতকরা ৩০ জনই মৃত্যুবরণ করেন। এ সময়ে এই প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখা এবং শরীরের যে কোনো ক্ষতস্থান খোলা অবস্থায় না রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
এ দিকে, জাপানের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে এই মরণব্যাধি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া গাস। ২০২২ সালে ইউরোপের ৫টি দেশেও এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে বলে জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক বরাতে জানা গিয়েছে।